শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতির তালিকার শীর্ষে ‌প্রশ্ন ফাঁস

প্রশ্ন ফাঁস
প্রশ্ন ফাঁস  © সংগৃহীত

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নানাভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ। অবশ্য শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি দীর্ঘকাল থেকে চললেও বর্তমানে তা শিক্ষার মুল ভিত্তিকে নড়বরে করে দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত রয়েছে এ দুর্নীতির বিস্তার। আর এ দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন পর্যবেক্ষনের করে সম্প্রতি শিক্ষাব্য়বস্থায় অন্তত ১৪টি চরম দুর্নীতিপ্রবণ খাত চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এ ১৪টি খাতের শীর্ষে রয়েছে ‌‘প্রশ্ন ফাঁস’।

দুদকের এ পর্যবেক্ষন ও দুদকের সুপারিশের ওপর ২৬ মে অভ্যন্তরীণ সভার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে ওই সভায় ১৪টি দুর্নীতিপ্রবণ খাতে দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও দুদকে সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

দুদকের চিহ্নিত দুর্নীতিপ্রবণ খাত ও কাজগুলো হচ্ছে- প্রশ্ন ফাঁস  বিভিন্ন ধরনের ভবন বা পূর্তকাজ নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি, বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আরও রয়েছে নোটগাইড, কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষক বদলি ও পদায়ন, প্রকল্প, প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণের নামে অর্থ ব্যয়। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ৩৯টি সুপারিশ করেছে দুদক।

সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রশ্ন প্রণয়নে মেধাবী, সৎ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষক বাছাই করে নিয়োগ কমিটিতে রাখা এবং তাদের নজরদারি করা। এ অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও আইসিটি আইনে মামলা করা। এছাড়া দুদকও সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধে মামলা করতে পারবে। আরও সুপারিশকরা হয়েছে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণে যারা থাকবেন তাদের সন্তান বা পোষ্য কেউ পরীক্ষার্থী নেই সেই অঙ্গীকার নেওয়া। পরীক্ষা কেন্দ্র সংখ্যা কমানো ও উপজেলা সদরে রাখার কথাও বলা হয়েছে।

দুদকের তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসা। শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করা, পাঠ্যপুস্তক, কোচিং মালিক এবং কিছু শিক্ষকের অবৈধভাবে স্বল্পসময়ে সম্পদ অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রমের মনিটরিংয়ের অভাব এবং অভিভাবকদের অসচেতনতাকে এরজন্য দায়ী করা হয়। এছাড়াও বলা হয়েছে কোনো কোনো স্কুলের প্রধান অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অন্য বিষয়ের শিক্ষককে ইংরেজি-গণিতের ক্লাস দেন যাতে কোচিং বাণিজ্য করতে পারে।

এ অনিয়ম রোধে ৮টি সুপারিশ পেশ করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিশ্চিতে মনিটরিং জোরদার করা। সরকারি হাইস্কুলে নীতিমালা মেনে বদলি। গ্রামীণ স্কুলে গণিত ও ইংরেজির শিক্ষক সংকট দূর করা ও শহরের স্কুলে অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা যাতে এই দুই বিষয়ে ক্লাস নিতে না পারে তা নিশ্চিত করা। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বর্ণনামূলক, সৃজনশীল ও বিশ্লেষণধর্মী হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: শিক্ষক উৎপল হত্যাকারী জিতু বহিষ্কার, শনিবার খুলছে স্কুল।

কোচিং বানিজ্য রোধে এমসিকিউ সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া, কোচিং নীতিমালার বাইরে যেসব শিক্ষক কোচিং করান তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া, কোচিং সেন্টার বন্ধ ও এর মালিকদের মধ্যে যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এ বিষয় খতিয়ে দেখবে দুদক। এছাড়া ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নোট-গাইড প্রকাশনা সংস্থায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে দুদক।

এছাড়া দুর্নীতির উৎসগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনসিটিবির ভর্তির সময়ে নানা খাতে অর্থ আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করা, বিভিন্ন অপরাধ ও অভিযোগমুলক কর্মকাণ্ডে ইইউ এ দায়সারা মনোভাব ও অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি রোধে যথাক্রমে ৫, ৬ ও ৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছে দুদক।


সর্বশেষ সংবাদ