এক চুঁইগাছ থেকেই আয় ৩৫ হাজার টাকা

টিডিসি সম্পাদিত
টিডিসি সম্পাদিত

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার মধ্যে চার উপজেলাতেই ঔষধি গুণসম্পন্ন চুঁইঝাল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। পাঁচ বছর বয়সী একটি চুঁইগাছ দু-তিন মণ ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিমণ চুঁই ১০-১২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত চাহিদাও বেড়েছে লতা-জাতীয় উদ্ভিদটির। তবে এ অঞ্চলে চুঁইঝাল উৎপাদন হলেও এখানকার চেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। 

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ জানায়, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় চুঁইঝাল উৎপাদিত হচ্ছে। লতা-জাতীয় উদ্ভিদটির চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ বাড়ির বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও সুপারিগাছে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরগাছা-জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় এর চাষে বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না। যেকোনো গাছের গোড়ায় সামান্য সার দিয়ে চুঁইঝালের একটি লতা রোপণ করলেই স্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। গাছের বয়স যত বাড়তে থাকে এর শিকড় ও লতা এবং কাণ্ড তত মোটা হতে থাকে। একটি চুঁইগাছ তিন বছর বয়স হলেই পরিপক্ব হয় এবং বিক্রি উপযোগী হয়। এ ছাড়া আরও বেশি বয়সী গাছ বিক্রি করলে তার কাণ্ড ও লতা বেশি মোটা হয় এবং দামও বেশি পাওয়া যায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি চুঁই দু-তিন মণ ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিমণ চুঁই ১০-১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসাবে একটি চু্িগিাছ থেকে ৩৫-৩৬ হাজার আয় হয়।

আরও পড়ুন: হাসনাতের জামা-জুতা নিয়ে বিদ্রূপ ছাত্রদল নেতার, কমেন্টে কড়া জবাব হাসনাতের

চাষিরা জানান, মাটিভেদে কোনো কোনো গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধী কীটনাশক স্প্রে করলে সহজেই নিরাময় করা যায়। চুঁইঝাল মূলত মাংসের তরকারিতে ব্যবহার করলে এর স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি পায়।

জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের চাকেরকুটি এলাকার হোসেন আলী বলেন, ‘আমি ২৫-৩০ বছর ধরে বাড়ির বিভিন্ন গাছে চুঁইঝাল চাষ করছি। প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার টাকার চুঁইঝাল বিক্রি করি। চুঁইঝাল চাষে তেমন খরচ নেই। আমাদের প্রায় ২০০-২৫০টির মতো গাছে চুঁইঝাল রয়েছে। এ ছাড়া আমার গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি চুঁইঝালের গাছ রয়েছে।’

একই এলাকার সাঈদুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষের চুঁইঝাল চাষ করা দেখে আমি গত চার বছর আগে কিছু গাছে লাগিয়েছি। একবার বিক্রি করেছি। কোনো প্রকার ব্যয় ছাড়াই লাভ হয়েছে। আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা ভাবনা করছি।’

শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নামের একজন বলেন, ‘চুঁইঝাল চাষে আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির যেকোনো গাছে চাষ করা যায়। এ গাছটি চাষে তেমন খরচও নেই। পরিচর্চাও করতে হয় না তেমন। আমরা চুঁইঝাল চাষে ভালোই আয় করছি।’

আরও পড়ুন: হকারের দখলে ঢাকা কলেজের ফটক, ফুটপাতে হয়রানির শিকার পথচারী

নাগেশ্বরী কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘চুঁইঝাল মসলা ও ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ। উপজেলার চাকেরকুটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় এ গাছ আছে। এ গাছে তেমন কোনো পরিচর্চা করতে হয় না। বিশেষ করে বাগান বাড়িতে যে গাছগুলো আছে, তার গোড়ায় লাগালে হয়ে যায়। কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার কারণে দিন দিন চুঁইঝাল চাষ বাড়ছে। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে কিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বিক্রি করছে। ওই সব এলাকায় গাছটির অনেক কদর রয়েছে।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চুঁইঝাল মূলত লতা-জাতীয় উদ্ভিদ। এটি তরকারিতে স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া ব্যথা, সর্দি-কাশি ও জ্বর নিরাময়েও এর ভূমিকা অপরিসীম। আর চুঁইঝাল নিয়ে গবেষণা করে এর চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’

আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের মিছিল ছত্রভঙ্গ করলো ছাত্রদল, আটক ৩

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চুঁইঝাল চাষ বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রামে তরকারিতে এটির কদর কম থাকলেও, খুলনা বিভাগে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ