এমপিওভুক্তি, বদলি বাণিজ্যে অঢেল সম্পদের মালিক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী  

মনিরুজ্জামান মনির ও মাউশি লোগো
মনিরুজ্জামান মনির ও মাউশি লোগো  © ফাইল ফটো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি ও বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুদক। 

জানা গেছে, ২০০৫ সালে চুয়াডঙ্গার দর্শনা সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে চাকরি পান মনির। ওয়ান ইলেভেনের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) স্কুল শাখায় বদলি হন। এরপরই জড়িয়ে পড়েন নানা অনৈতিক কাজে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাউশির প্রধান শাখাতেই ছিলেন তিনি। 

২০১৪ সালে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করে নয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এরপর মনির তার নিজ বিভাগ খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ে পদায়ন নেন। এরপর প্রথমে কুষ্টিয়া এবং পরবর্তীতে মাউশির খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালকের কার্যালয়ে বদলি হন মনির। খুলনা উপপরিচালকের কার্যালয়ে থাকাকালে মনির খুলনা বিভাগের ১০ জেলার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, বদলি ও গ্রেড পাইয়ে দেওয়ার তদবির বাণিজ্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মনির বর্তমানে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। জানতে চাইলে এস এম ছায়েদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মনিরের বিরুদ্ধে দুদকে একটি তদন্ত চলছে বলে শুনেছি। মনির আমার দপ্তরে আসার পর তাকে নজরদারিতে রেখেছি। এখানে যেন কোনো বাজে কাজে যুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান মনির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। তুই কত বড় সাংবাদিক হয়েছিস তা দেখে নেব।’ 

মনিরের যত সম্পদ

রাজধানী ঢাকায় মনিরের কেনা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী মোসা. রিমা খাতুন। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ১ হাজার ৭৮০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের দাম কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে রিমার নামে রয়েছে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত (এফডিআর)।

ঢাকার কালশীতে বহুতল ভবন করছেন মনিরুজ্জামান মনির। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাউশির সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এই বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন মনির। নিজেই করেন সবকিছুর তদারকি। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ছদ্মবেশে যোগাযোগ করলে বাড়িটিতে মনিরের অংশীদারত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আব্বাস নামের কেয়ারটেকার।

গুঞ্জন রয়েছে, ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুনের বোনের মেয়ের নামে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন মনিরুজ্জামান মনির (৪৫)।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুসলিমপাড়ায় হোমিওপ্যাথি কলেজের পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মনিরের রয়েছে নিজস্ব একটি বাগানবাড়ি। এই বাগানবাড়িতে রাখা আছে একজন কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক)। স্থানীয়রা জানান, জমিসহ এ বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা। ওই জমির ১০ কাঠার মালিকানা প্রথম স্ত্রীর বাবার নামে। বাকি ৬ কাঠা মনিরের নিজের নামে আছে। এই বাগানবাড়ির দক্ষিণ পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে আরও দুটি প্লট। তার দামও অর্ধকোটির ওপরে। এই বাগানবাড়ির পূর্ব পাশে খানিকটা দূরে আছে আরেকটি বাড়িসহ প্লট। এই বাড়িসহ জমিরও আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা।

মনিরের ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা শহরের জোলের ধারে চারতলার বাড়িতে বসবাস করেন। প্রায় ৭০ লাখ টাকা দামের ওই চারতলা বাড়িটি সোনিয়ার নামে। এই বাড়িটির পশ্চিম পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা প্রায় ১০ কাঠার একটি প্লট আছে। শহরের বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় আছে ৫ কাঠার একটি বাগান। মুসলিমপাড়া মাজারের পাশেই আছে আরেকটি বাগান। শহরের নীলার মোড়েও রয়েছে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের জমি। এ ছাড়া নীলার মোড়ের পাশেই দুটি দোকানসহ আরেকটি প্লট আছে। সুমিরদিয়া মাঠে রাস্তার পাশেই রয়েছে ১০ কাঠার একটি বাগান। 

দর্শনার পুরোনো বাজারপাড়ায় ৫ কাঠা জমির ওপরে দুই ইউনিটের একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়ির আনুমানিক মূল্য অর্ধকোটি টাকা। দর্শনা পৌরসভায় ওই বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর মনিরুজ্জামান মনিরের নামেই।

তথ্য সূত্র: আজকের পত্রিকা


সর্বশেষ সংবাদ