২২ বছরেও বাড়েনি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ফটো

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার নুরপুর দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর রাশেদ মোশারফের বেতন স্কেল ১৭ হাজার টাকা হলেও তিনি ঈদ বোনাস পাবেন ৪ হাজার ২০০ টাকা। তার মতো কয়েক লাখ শিক্ষক ঈদে উৎসব ভাতা পেয়েছেন মূল বেতনের চার ভাগের এক ভাগ। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বোনাস পান মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। 

পাবনার সুজানগর উপজেলার খলিলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুল্লাহ রাজু উৎসব ভাতা পান ৩ হাজার ১২৫ টাকা। এ শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক বোনাস পান ৩ হাজার ১২৫ টাকা। বর্তমান যুগে এই টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শিক্ষক ঈদ উদযাপন করবেন? আমাদের চেয়ে কর্মচারীরা বেশি বোনাস পান। বিষয়টি অমানবিক। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে শিক্ষকদের বোনাস বাড়েনি। শিক্ষকদের উৎসব ভাতা শতভাগ করতে হবে।’

জানা গেছে, ২০০৩ সালের আগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পেতেন না। ২০০৩ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই বছরের অক্টোবর থেকে সেটি কার্যকর হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের দেওয়া হবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। তবে দুই ঈদে ২৫ শতাংশ করে ভাগ করে তা দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। ওই সভায় কর্মচারীদের শতভাগ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই ঈদে ৫০ শতাংশ করে তা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দুই যুগ আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারও ঈদুল ফিতরে ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। 

শিক্ষকরা বলছেন, দুই ঈদে ৫০ শতাংশ বোনাসের সিদ্ধান্ত যখন হয়, তখন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ৯৫ শতাংশ সরকারের কাছ থেকে পেতেন। বর্তমানে শতভাগ বেতন সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেলেও দীর্ঘ ২৩ বছরেও শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি পায়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মূল বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার টাকা, উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষদের ৪৩ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, টাইম স্কেলপ্রাপ্ত প্রভাষক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ২৯ হাজার টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ২৩ হাজার টাকা, প্রভাষক/গ্রন্থাগারিক, সহকারী শিক্ষকদের (টাইম স্কেলপ্রাপ্ত) ২২ হাজার টাকা, প্রদর্শক/সহকারী গ্রন্থাগারিক/শরীরচর্চা শিক্ষক/সহকারী শিক্ষকদের (টাইম স্কেল ব্যতীত) ১৬ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের (বিএড ব্যতীত) ১২ হাজার ৫০০ টাকা।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজিজী  বলেন, ‘সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের সিকিভাগ উৎসব ভাতা হিসেবে একজন এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পায় মাত্র ৩১২৫ টাকা। এই সামান্য অর্থ দিয়ে একজন শিক্ষকের পক্ষে কোনোভাবেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করা সম্ভব নয়।

এ শিক্ষক নেতা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের লাগাতার ২২ দিনের আন্দোলনের কারণে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বিদায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ে আগামী ঈদ-উল-আযহা থেকে উৎসব ভাতা বৃদ্ধির এবং সম্পূরক বাজেট এবং আগামী বাজেট থেকে বাড়িভাড়া ও মেডিকেল ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা অবিলম্বে ঘোষণা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জেনেছি। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য জানতে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক-২ শাখার অতিরিক্ত সচিবের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ