এমপিও শিক্ষকদের জন্য আচরণবিধি, রাজনীতি সাময়িক বরখাস্তসহ যা বলা আছে

  © সংগৃহীত

সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ‘সরকারি চাকুরি বিধিমালা-২০১৮’ এবং ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯’ মেনে চলেন। আচরণবিধি না মানলে সরকারি চাকরিজীবীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। তবে দেশে পাঁচ লাখের কাছাকাছি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপরাধ করলে তাদের সুনির্দিষ্ট বিধিমালায় শাস্তি দেওয়া যায় না। এবার তাদের জন্য আলাদা বিধিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ক্লাস ফেলে জাতীয়করণ নিয়ে রাজধানীতে আন্দোলনে যোগ দেওয়া শিক্ষকদের বারবার সতর্ক করা হলেও শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক শিক্ষক জোর করে তাঁর কোচিংয়ে প্রাইভেট পড়তে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন। কেউ কেউ ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করেন।

এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আচরণবিধি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণবিধি ও শৃঙ্খলা বিধিমালা’র খসড়া এরই মধ্যে প্রস্তুত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

এ খসড়া নিয়ে ৫ মে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাঁপা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার অতিরিক্ত সচিব, মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, পরিচালক (মাধ্যমিক) সৈয়দ জাফর আলী ও পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী অংশ নেন।

জানা গেছে, গত বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য দেওয়া হয় নতুন চাকরিবিধি তৈরির প্রস্তাব। এর পরই মূলত এ নিয়ে কাজ শুরু হয়।

কী আছে খসড়ায়

খসড়া বিধিমালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা শিরোনামে ১০টি বিধি রয়েছে। এর একটিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেবেন না, এর সাহায্যে চাঁদা দেওয়া বা অন্য কোনো উপায়ে এর সহায়তা করবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে নিজেকে জড়াবেন না।’

আরেক বিধিতে আছে, ‘কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।’ অনুমোদন ছাড়া টিউশনি নিষিদ্ধের কথাও খসড়ায় বলা হয়েছে।

খসড়া চাকরিবিধিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক নিজ নামে প্রকাশিত কোনো লেখায় অথবা জনসমক্ষে দেওয়া বক্তব্যে অথবা পত্রিকায় এমন কোনো বিবৃতি বা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন না, যা সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে, এমন বিতর্কিত ধর্মীয় বিষয়ে অংশ না নিতেও বলা হয়েছে।

এ ছাড়া অদক্ষতা, পেশাগত অসদাচরণ, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে তিরস্কার, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তি হতে পারে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা আছে।

কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে খসড়ায় বলা হয়েছে। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবে। কমিটিতে জেলা সদরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা তাঁর প্রতিনিধি, উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা তাঁর প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি এবং একজন শিক্ষককে রাখতে হবে।

এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা হলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। সাময়িক বরখাস্তকালে বেতনের অর্ধেক খোরপোশ পাবেন। এ ছাড়া কোনো অভিযোগ আদালতের রায়ে মিথ্যা প্রমাণিত হলে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।

যদিও নাম প্রকাশ না করে শিক্ষক নেতাদের অনেকে এই খসড়াকে অযৌক্তিক বলেছেন। তাদের দাবি, বেসরকারি ব্যক্তিদের রাজনীতি করার অধিকার পৃথিবীজুড়ে স্বীকৃত। ইউনেস্কো এবং আইএলও সনদেও এটি বলা আছে। তবে নতুনভাবে শিক্ষকদের জন্য সরকার রাজনীতি করার অধিকার বন্ধ করতে চাইছে, যা ইউনেস্কো সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।


সর্বশেষ সংবাদ