৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি হল সংসদের ভিপি-জিএসের!
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৮:০৯ PM , আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৬ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ক্যান্টিনের সদ্য সাবেক পরিচালককে গত মাসে পঁচা মাছ-মাংস ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু প্রায় একমাস পরে এসে হল সংসদের ভিপি ও জিএসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগ তুলেছেন ওই পরিচালক ও তার ছেলে।
অভিযোগকারী মো. মাহফুজুল হক মোল্লা ও তার ছেলে হেলাল হল সংসদের ভিপি সজিবুর রহমান সজিব ও জিএস নাজমুল হাসান নিশানের বিরুদ্ধে প্রায় চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও বিভিন্ন সময় হুমকির অভিযোগ করেন। তাদের কাছে এর বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
মাহফুজুল হক ও তার ছেলে হেলাল অভিযোগ করেন, গত জুন মাসে তাদের কাছে হল সংসদের ভিপি সজিব ও জিএস নিশান প্রায় চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ৩০ জুনের মধ্যে চাঁদা দিতে না পারলে ক্যান্টিন গুছিয়ে হল থেকে তাদের চলে যেতে বলা হয়। অন্যথায় হলে ঢুকলে পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
তাদের অভিযোগ, সজিব ও নিশান ছাত্রলীগের অন্য কর্মীদের মোবাইল দিয়ে ফোন করে তাদের কাছে টাকা চাইতেন। টাকা না দিলে ক্যান্টিন চালাতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন তারা। পুরো জুন মাস এভাবে তাদের জ্বালাতন ও হুমকি দেওয়া হয়। তাই শুধু চাঁদা না দেওয়ার জন্য পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ক্যান্টিন পরিচালনা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন মাহফুজ মোল্লা ও তার ছেলে।
চাঁদা দাবি করা হলেও হল প্রশ্রাসনের কাছে অভিযোগ না করার বিষয়ে মাহফুজ মোল্লার ছেলে হেলাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা ভয়ে অভিযোগ করিনি। অভিযোগ করলে আমাদের মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’
গত মাসে পঁচা মাছ-মাংস ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, চাঁদার টাকা না দেওয়ায় পরিকল্পনা করে তাদের মাংসে ভিপি সজিব ও তার অনুসারীরা কাদা ও মাটি মিশিয়ে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে তাদের ফাঁসিয়েছেন। এ বিষয়ে হেলাল বলেন, ‘এসব তারা আগে থেকে পরিকল্পনা করে আমাদের ফাঁসিয়েছে এবং জরিমানা করিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাছ-মাংস যদি পঁচাই হতো তাহলে হল প্রশাসনের মাধ্যমে কেন তা শনাক্ত করা হলো না। বাজার আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে ভিপি সজিব ও তার অনুসারীরা এসে মাছ-মাংস নিয়ে কাদা মাখিয়ে দেয়। এরপর এগুলো পঁচা বলে প্রচার করে এবং প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ক্যান্টিন পরিচালনা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিজয় একাত্তর হল সংসদের জিএস নাজমুল হাসান নিশানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ক্যান্টিন পরিচালক মাহফুজ মোল্লা ও তার ছেলে হেলাল তাদের জরিমানা ও অব্যাহতির জন্য হল সংসদের ভিপি সজিবুর রহমান সজিব ও জিএস নাজমুল হাসান নিশানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগ করলেও সজিব তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ভাই আপনারা তো জানেন পঁচা মাছ-মাংস আনা ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের জন্য তাদের জরিমানা করা হয় এবং ক্যান্টিনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযানটি আমি চালিয়েছিলাম বলে আমার ওপর তাদের অনেক ক্ষোভ। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।’
শুধু পঁচা মাছ-মাংস ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে মাহফুজ মোল্লাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সজিব। আর অভিযান পরিচালনার জন্য সজিবের ওপর ক্ষোভ থেকেই তার ওপর এই মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দাবি করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অনেকদির ধরে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ ছিল। তাদের কয়েকবার সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা খাবারের মান উন্নত না করায় এবং পঁচা মাছ-মাংস সরবরাহ করায় আমরা তাদের জরিমানা করি। পরে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
তবে হল সংসদের ভিপি-জিএসের চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গতবছর থেকে বিজয় একাত্তর হল ক্যান্টিন পরিচালনা করছিল মো. মাহফুজুল হক মোল্লার মালিকাধীন ‘মেসার্স আদর্শ বেকারী এন্ড হোটেল’। কিন্তু গত জুলাই মাসের এক তারিখে ক্যান্টিন থেকে ৪০ কেজি পঁচা হিমায়িত প্যাকেটজাত মহিষের মাংস এবং ৫ কেজি পঁচা মাছ উদ্ধার করা হয়। এর দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়েছিল হল প্রশাসন।