ঢাকায় দিনদুপুরে পুলিশ পরিচয়ে ঢাবি ছাত্রীকে অপহরণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কল্যাণপুরে নামেন তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। এরপর রিকশা বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় রিকশার গতিরোধ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল, নিজেকেও পুলিশের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর ছাত্রীর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, ‘ব্যাগে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। আপনাকে থানায় যেতে হবে।’

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে ছুটতে থাকেন ওই ব্যক্তি। এরপর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় ছুরি দিয়ে আঘাতের ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেন। তাঁকে নিপীড়নের শিকারও হতে হয়। শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যমকের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তরুণীর সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি এগিয়ে যান। তখন দ্রুত তরুণীর ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালান অপহরণকারী। এরপর ওই ব্যক্তি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ছাত্রীকে উদ্ধার করে। ঢাকায় দিনদুপুরে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেল।

গত ২৫ আগস্ট দুপুরে দিয়াবাড়ী এলাকার ই-পাসপোর্ট ভবন থেকে ৩০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন তুরাগ থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগটির গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ ছাড়াও ডিবি ও একাধিক সংস্থা এর ছায়াতদন্তে নামে। বিষয়টি নিয়ে শুরুতে কেউ মুখ খুলতে চাননি। রাজধানীতে এক ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনার তথ্য বুধবার জানা যায়।

এ ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী বলেন, যা ঘটেছে তা পুলিশকে জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে থাকায় বিস্তারিত পরে জানাবেন। ডিবির প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, ছাত্রীর সঙ্গে যা ঘটেছে, তার ছায়াতদন্ত চলছে। ওই ব্যক্তির আসল পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। এরপরই সব খোলাসা হবে।

আরও পড়ুন: বিয়েতে রাজি না হওয়ার ক্ষোভে সহযোগীদের নিয়ে ধর্ষণ ছাত্রীকে, অতপর...

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, ওই ছাত্রীর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু হয়েছে। বেশ কিছু অগ্রগতিও আছে। দ্রুত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন জন্মদিন উপলক্ষে ওই ছাত্রীকে উপহার দিয়েছেন বন্ধুরা। এর মধ্যে শাড়ি, চকলেটসহ আরও অনেক কিছু ছিল। সেই প্যাকেট দেখিয়ে পুলিশ পরিচয়ধারী ব্যক্তি তাকে ফাঁদে ফেলেন। ছাত্রী হতচকিত হয়ে যান। ব্যাগ খোলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।

আরেক কর্মকর্তা জানান, অপহরণের সঙ্গে জড়িতকে শনাক্ত করতে ৪-৫টি টিম কাজ করছে। পুলিশের ধারণা- পেশাদার কোনো অপরাধী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিতে পারে। কল্যাণপুর থেকে দিয়াবাড়ী ৮-১০ কিলোমিটার হলেও পথে ওই ছাত্রী কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। ওই ব্যক্তি বলছিলেন- ‘আরেকটু দূরেই থানা’। সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলের অস্পষ্ট নম্বর পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৩০-৪০-এর মধ্যে হতে পারে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশ পরিচয়ে যে কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে কল্যাণপুরের মতো ব্যস্ত এলাকায় অপহরণ করা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। আসল পুলিশ নাকি পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা বের করার দায়িত্বও।


সর্বশেষ সংবাদ