আবারও মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ পেল ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রী

উম্মাহাতুল মুমিনীন মহিলা মাদ্রাসা
উম্মাহাতুল মুমিনীন মহিলা মাদ্রাসা   © ফাইল ফটো

জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে আবারও মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ পেলো রাজশাহীর ধর্ষণের শিকার ওই শিশু শিক্ষার্থী। এর আগে, ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে শিশুটির ভর্তি বাতিল করেছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) তদন্তে গিয়ে এ ঘটনার সত্যতা মেলে। এখন ভুল স্বীকার করে পুনরায় ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি নিতে চেয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। 

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সোমবার সকালে মহানগরীর হড়গ্রাম মুন্সিপাড়া এলাকার উম্মাহাতুল মুমিনীন মহিলা মাদ্রাসায় তদন্তে গিয়েছিলেন তারা।

এ সময় তাদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে এ ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে আবারো মাদ্রাসার ভর্তি নিতে চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতে ওই ছাত্রীর মা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে অন্য একটি স্কুলে তিনি তার মেয়েকে ভর্তি করে দিয়েছেন। তবে ওই ছাত্রীকে এবার বিনা বেতনেই পড়ার সুযোগ দিতে চাচ্ছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

সকালে রাজশাহীর উম্মাহাতুল মুমিনীন মহিলা মাদ্রাসায় যান রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ সময় মাদ্রাসার পরিচালক মো. হাবিবুল্লাহ এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ওই ছাত্রীর বাবা ও মায়ের কাছ নিঃশর্ত ক্ষমা চান। একই সঙ্গে ওই ছাত্রীকে আবারও মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ দিতে অঙ্গীকার করে মাদ্রাসার পরিচালক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, শিশুটি যদি সেখানে পড়তে চায় তাহলে তার লেখাপড়ার সব ব্যয় বহন করবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই ছাত্রীর মা মেয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এ ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান।

আরও পড়ুনঃ শর্তসাপেক্ষে খোলা থাকবে যবিপ্রবির আবাসিক হল

ছাত্রীর মা বলেন, ভর্তি নিয়েও তার মেয়েকে একবার টাকা ফেরত দিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আবারও এ মাদ্রাসায় দিলে পরিচালক তার মেয়ের সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন না। তাই এখানে আর মেয়েকে পড়াতে চান না তিনি। এ মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি তার মেয়েকে অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন বলেও সবাইকে জানিয়েছেন।

এদিকে দুপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের শিশু সহায়তার ১০৯৮ নম্বর থেকেও তার স্বামীকে কল দেওয়া হয়েছে। তারা তার মেয়ের সম্পর্কে এবং এ ঘটনার ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নিয়েছে। কথা শেষে তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, এখন থেকে তারা ওই শিশুর লেখাপড়াসহ সব ধরনের সহায়তা দেবেন। এ সময় তিনি তার কন্যাশিশুর ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন বলেও জানান নির্যাতিত ওই ছাত্রীর মা।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর শিশুর প্রতি এমন আচরণ খুবই অমানবিক। এ বিষয়টি নজরে আসার পরপরই রাজশাহী জেলা প্রশাসক তাকে এবং জেলা শিক্ষা অফিসারকে এ ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্দেশ দিয়েছিলেন। সরেজমিনে এসে তারা ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসা পরিচালক ভুল স্বীকার করেছেন। শিশুটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি নিয়ে বিনা বেতনে পড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিচালক। এখন শিশুটির পরিবার থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে তারা এ ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে রাখবেন।


সর্বশেষ সংবাদ