‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে.. আমি এত যন্ত্রণা নিতে পারছি না'

  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে যৌতুকের অপমানে এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম রিমা আকতার (২০)। তিনি পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, এদিন রাতেই রিমার গায়ে হলুদ এবং শুক্রবার দুপুরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। 

পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কের পর রিমার বিয়ে হচ্ছিল মিজানুর রহমান মোরশেদ নামে এক যুবকের সাথে। মিজানুর আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত।

বিয়ের আগে দুই পক্ষের মধ্যে যৌতুকের দাবিকে কেন্দ্র করে ঝগড়া চলছিল। মিজানুর রিমার পরিবারের কাছে নগদ টাকা, ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন দাবি করেছিলেন।

রিমার পরিবার জানায়, দুদিন আগেও রিমার কৃষক বাবা মনির আহমদ নগদ দুই লাখ টাকা দিয়েছিলেন বর মোরশেদের পরিবারকে। তার পরও ফার্নিচার নিয়ে চলছিল দুই পক্ষের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে রিমাকে ফোনে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন মোরশেদ। সেই অপমানে রিমা রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

এইসব দাবি পূরণ করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রিমা। বিয়ের অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে গায়ে হলুদের প্রস্তুতি চলছিলো তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যার আগে রিমা একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। চিরকুটে তিনি মিজানুরকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। সেখানে লেখা আছে, ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছি এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছো। আমি পারছি না, এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না। ভালো থেকো, আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মান ওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্ট মর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ো।’

চিরকুটের শেষে রিমা আরো লিখেছেন, ‘আর আমার পরিবারকে বলছি, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বেনা। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’

নিহতের ভাই আজগর হোসেন বলেন, "বিয়েতে বরযাত্রীর খাওয়া-দাওয়া বাবদ মোরশেদের পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তার পরও আমার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ ও বিয়ের খরচ হিসেবে আরো নগদ টাকা দাবি করে। উভয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যৌতুক দাবি করার অপমান সইতে না পেরে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।"

ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। রিমার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

পটিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, হাইদগাঁও এলাকায় এক তরুণীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু লাশ পাওয়া যায়নি। তার লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ