নিজ হাসপাতালেই বকশিস সিন্ডিকেটের কবলে চিকিৎসক

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল  © ফাইল ছবি

সেই অভিযোগের চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে রমেক কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই কর্মচারীকে (চুক্তিভিত্তিক) চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। দুই কর্মচারীকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘যে দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের একজন মাসুদ, অন্যজন ঝর্ণা। তারা হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী নন, সারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওই দুই কর্মচারী। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের এখানে চুক্তিতে কাজ করেন তারা।’

চিকিৎসকের কাছে ‘বকশিস’ নেয়ার ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা জামান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক হরিপদ সরকার ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবুল হাসান।

কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগকারী চিকিৎসক এ বি এম রাশেদুল আমীর বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার মাকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায় পরিবারের লোকজন। এ সময় তারা ২৫০ টাকা ভর্তি ফি বাবদ চায়। কিন্তু আমার পরিচয় পাওয়ার পর ২৫ টাকার ভর্তি ফি ৫০ টাকা নেয়। পরে সিসিইউতে পাঠালে সেখানেও ২০০ টাকা নেয়। সেখানে আমার পরিচয় জানার পরও তারা দুর্ব্যবহার করে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মাকে ভর্তি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্টেপে টাকার জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। ওই কর্মচারী নিজে মাসুদ নামে পরিচয় দেয়। আমি বিষয়টি একসময় ভিডিও করি। সেটি আমার ফেসবুকে পোস্ট করি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হয়তো আমার অভিযোগ অনেকে নানাভাবে নিতে পারে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার যখন আমার মাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে চলে আসি তখনও ময়লা পরিষ্কার বাবদ আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি তো ভোগান্তিতে পড়েছি। সাধারণ জনগণ তো আরও ভোগান্তিতে আছে। আমি চাই মানুষ যেন হাসপাতালে এসে হয়রানির কবলে না পড়েন।’

আরও পড়ুন: প্রক্সি দেওয়ায় ৬ ছাত্রী বহিষ্কার

টাকা চাওয়ার ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করলে চিকিৎসক রাশেদুল আমীরকে অনেকেই সেটি ডিলিট করে দিতে বলেন। তাকে বলেন, হাসপাতালের সম্মান এর সঙ্গে জড়িত, তাই যেন ভিডিওটি ডিলিট করে দেন। এরপর তিনি ভিডিওটি ডিলিট করে দেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করবেন না বলেও জানান।

সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘রংপুর হাসপাতালের প্রাশাসনিক জায়গাটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এটা দেখভাল করার মতো যে কেউ নেই তারই বহিঃপ্রকাশ একজন চিকিৎসক নিজেই হয়রানির শিকার হওয়া, তার অভিযোগ করা।

‘বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষে সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু তারা বিষয়টিতে কর্ণপাতও করেনি। এখানে সেবা তো দূরের কথা, ন্যূনতম নাগরিক যে সেবাগুলো আছে, সেটাও এখানে আর নেই। আমরা এ থেকে প্রতিকার চাই।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পরিষদে কথা বলেছি। অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান থেকে তারা চুক্তিতে এসেছে, তাদেরও আমরা চিঠি দিয়েছি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

 


সর্বশেষ সংবাদ