চাপে পড়ে প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষা জেলায়!

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক
ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক  © ফাইল ফটো

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা জেলায় জেলায় আয়োজন করতে রাজনৈতিক নেতাদের চাপ দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই একটি চক্র রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে জেলায় পরীক্ষা আয়োজন করতে মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করাচ্ছে। জেলায় পরীক্ষা হলে প্রভাব বিস্তার করে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগে সহায়তা করা যাবে এমন ধারণা থেকেই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জেলার একাধিক চাকরিপ্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় পরীক্ষা আয়োজন করা হলে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। এছাড়া স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হওয়ায় মেধাবীরা চাকরির সুযোগ পাবেন। অল্পকিছু প্রার্থী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা জেলায় আয়োজনের দাবি তুলেছে। যারা জেলায় পরীক্ষা চাচ্ছে তাদের পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দফায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ও কেন্দ্র নিয়ে চিঠি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রথমটিতে বলা হয়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে রাজধানী ঢাকায় পাঁচ ধাপে পরীক্ষা হবে। পরে আরেক চিঠিতে বলা হয়, ৮ এপ্রিল থেকে চার ধাপে পরীক্ষা হবে। প্রথমটিতে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ স্বাক্ষর করেন। আর দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিপিই মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম। অধিদপ্তরের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকলেও এটিকে গুজব বলেই আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: ফেসবুক আইডি হ্যাকিং থেকে বাচার উপায়

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ নানা অভিযোগ ওঠায় এবার কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা নিরলসভাবে কাজ করছিলেন। তবে নানা ধরনের চাপের কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে পারছেন না তারা। জেলায় পরীক্ষা আয়োজনের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে তাদের।

কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হবে না। কেননা এই পরীক্ষা ঢাকায় হবে নাকি জেলায় জেলায় হবে সেটি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুরুতে পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আবু বকর সিদ্দিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রার্থীদের এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে জানা নেই। নিয়োগ পরীক্ষা কোথায় হবে সেটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভালো বলতে পারবেন। উনাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: খুলনার ১১ সরকারি বিদ্যালয়ের ১০টিতেই নেই প্রধান শিক্ষক

পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে প্রশ্ন জানতে চান। তাকে প্রশ্ন পাঠানো হলে তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

এদিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচন ও তারিখ সংক্রান্ত যে দুটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়েছিল তা সঠিক ছিল। তারা প্রথমে ১ এপ্রিল থেকেই পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নানা মহলের চাপের কারণে পরবর্তীতে এটি বাতিল করা হয়। জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নিতেই এই চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পরীক্ষার তারিখ ও কেন্দ্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে নতুন করে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এর কারণে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হচ্ছে। নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্খিত। কোনো একটি মহলের চাপে এমনটি হতে পারে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় ১৩ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। করোনা মহামারীর কারণে এখনো পরীক্ষা হয়নি। পরে শূন্য পদ বাড়িয়ে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ