বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ
- মোতাহার হোসেন, ঢাবি
- প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৫২ AM , আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২৫ AM
আজ রবিবার বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে বইমেলা শুরু হলেও এবার সিটি নির্বাচনের জন্য একদিন পর দ্বার খুলছে মেলা প্রাঙ্গণের। রেওয়াজ অনুযায়ী দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ বইমেলার উদ্বোধন করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আজ বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিকেল পাঁচটার পর সাধারণ দর্শক-পাঠকের জন্য খুলে যাবে মেলার দরজা।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে অন্য প্রকাশকদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।
মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মেলা হচ্ছে এবার। দেওয়া হচ্ছে জাতির পিতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব। এবারের বইমেলায় গত বছরের তুলনায় বইমেলার স্টল ও পরিধি প্রায় ৩০ ভাগের মতো বাড়ানো হয়েছে। মেলায় প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লিখিত ২৬টি বই থেকে একটি করে আলোচনা সভার আয়োজন থাকবে। বঙ্গবন্ধু পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার থাকবে। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে মেলার আঙ্গিক ও সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে অনেক স্থাপনা করা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন অংশ বঙ্গবন্ধুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে তাঁর জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে ওঠে।
মেলার উভয় অংশে তিনটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। দুটি সোহরাওয়ার্দীতে ও একটি একাডেমি প্রাঙ্গণে। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ এবার বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয়েছে। শিশুচত্বর বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। শিশুপ্রহরের দিনগুলোতে ‘তারুণ্যের বই’ ব্যানারে শিশু-কিশোরদের বইপাঠে উৎসাহিত করা হবে। নামাজের ঘর ও টয়লেট ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও উন্নত করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য সম্প্রসারিত নামাজ ঘর থাকবে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাছে একটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকবে। প্রতি বছরের মতো এবারও বয়স্ক এবং অসুস্থ্য ব্যক্তিদের জন্য হুইল-চেয়ার সেবা থাকবে। তবে গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবী এ-কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এবার হুইল চেয়ারের সংখ্যা বাড়বে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট থাকবে।গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলায় এবার ৫৬০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ৮৭৩টি ইউনিট, ৩৪টি প্যাভিলিয়ন ও ১৫৮টি লিটলম্যাগ স্টল থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। এছাড়াও মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
গ্রন্থমেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
মেলার আয়োজন বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের বইমেলা হবে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গীকৃত বই মেলা আমরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেলায় আপনারা এর বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, বইমেলার প্রস্তুতি শেষ। আজ শুরু হচ্ছে বইমেলা।