বাধ্য হয়ে বাজার থেকে বেশি দামে পাঠ্যবই কিনছেন অভিভাবকরা

পাঠ্যবই
পাঠ্যবই  © সংগৃহীত

রাজধানীর নীলক্ষেত, বনশ্রী এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের আশপাশের লাইব্রেরিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় উচ্চমূল্যে ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণির বই বিক্রি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকরা চাইলে আলাদা কিংবা বইয়ের সম্পূর্ণ সেট একসাথে কিনতে পারছেন। তবে এর জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। সেট প্রতি ৩ হাজার থেকে বিভিন্ন ক্লাসের বইয়ের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। 

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও সরবরাহ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে এসব বই কিনছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এই কিন্তু বই না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সেটা নিরসনে বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে তারা বই কিনছেন।

বেশ কয়েকজন লাইব্রেরি মালিকের সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাদের ভাষ্য, চাহিদা থাকায় নতুন বছরের বই বিক্রি করছেন তারা। বিভিন্ন প্রেস থেকে বইয়ের কপি সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন তারা। অনেকে আবার মূল বইয়ের ফটোকপি প্রিন্ট করে বিক্রি করছেন। ফলে সব ক্লাসের বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। 

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে নীলক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই বিক্রি করতে দেখা গেছে। নীলক্ষেতের মীম বুক হাউজ, প্রিমিয়ার বুক হাউজ, আরাফাত বুক হাউজ, শহীদ বুক সেন্টার, বুক লাইন এবং আরিয়ান বুক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মীম বুক হাউজ অন্য সব লাইব্রেরি মালিকদের কাছে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছে। এসব বই বাংলাবাজার থেকে কিনে এনেছেন বলে জানিয়েছেন লাইব্রেরি সংশ্লিষ্টরা। 

নীলক্ষেতের আরাফাত বুক হাউজে গিয়ে দেখা গেলো, ২০২৫ সালের অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইটি বিক্রি করছে ২৫০ টাকায়। এনসিটিবির কোনও ক্লাসের বই ২০০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। একজন ক্রেতা বই কিনে ভাউচার চাইলে লাইব্রেরি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বোর্ডের বইয়ের ভাউচার দেওয়া হয় না। 

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই, সপ্তম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই বছরের প্রথম দিন দিতে দেখা গেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণির বাকি বইগুলো দেওয়া হয়েছে। অন্য বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে পৌঁছায়নি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, অথচ নীলক্ষেতে সবই পাওয়া যাচ্ছে এটা কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ জানায়, এক শ্রেণির মুদ্রণ মালিক এই কাজ করছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ‘এটা অসৎ প্রিন্টারদের কাজ। ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হানা দিচ্ছে। প্রিন্টারদের ডেকে এনে ধমক দেওয়া হয়েছে। শাস্তির আওতায় আনা হবে দোষীদের।’

বাংলাবাজার থেকে বই সরবরাহের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজিজ বুকের মালিক আজিজ মোল্লার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উজ্জ্বল নামে বই লাইব্রেরি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘১০ মিনিট পর কথা বলবো।’ কিন্তু পরে আর তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরিকল্পনা কমিশনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব বই দেওয়া সম্ভব হবে’।


সর্বশেষ সংবাদ