তরুণদের ভাবনায় আগামীর কৃষি

কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে

তরুণদের ভাবনায় আগামীর কৃষি
তরুণদের ভাবনায় আগামীর কৃষি  © টিডিসি ফটো

নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান অঞ্চল হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের আলাদা এক গুরুত্ব রয়েছে। তাই তো করোনা মহামারী, দারিদ্রতা, নগরজীবনের নানা অনিশ্চয়তা আর জলবায়ুর পরিবর্তনের ভেতরেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও টিকে থাকার মূল জায়গাটি হচ্ছে ভূমি ও কৃষক সম্প্রদায়।

তবে স্থায়িত্ব কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রধান খাদ্যশস্য ধান থেকে শুরু করে সবজি ফসল, মসলা বিভিন্ন ফল, মাছ, প্রাণিসম্পদ এমনকি এর সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কার্যকর ও ফলপ্রসূ গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ কৃষি নিয়ে তরুণরা কী ভাবছে? শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন- মো. আরাফাত রহমান অভি

আবির আহসান জুম্মা
শিক্ষার্থী: কৃষি অনুষদ, ৭৭তম ব্যাচ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দেশের কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। বেশি বেশি চাষাবাদের কারণে কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণয়নের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে নগরীর ভবন নির্মানে পরিবেশবান্ধব সবুজায়নকে প্রধান্য দিতে হবে। কৃষি বনায়নের মাধ্যমে আমরা একই জমিতে গাছ ও ফসল লাগাতে পারি।

ফলে একই জমি থেকে ফসল, ফল ও কাঠ আহরণ সম্ভব হবে। মাটি ছাড়া ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে হবে যা আমাদের ক্রমবর্ধমান জমি হারানোর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে কাজ করবে। আমদানি–নির্ভর ফসল বিশেষ করে মসলা, ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ ফসল একটি বিবেচ্য বিষয়। এটি নিশ্চিত করতে জৈব সার, জৈব বালাই ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

মাইসা মালিহা কণা
শিক্ষার্থী: এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, ৭৭তম ব্যাচ

পশুসম্পদে পোলট্রি অনেক বড় শিল্প। কৃষির পরই এর অবস্থান। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ আছে। পোলট্রি শিল্প বর্তমানে ভালো নেই। বিক্রয়মূল্য থেকে উৎপাদন খরচ বেশি। পোলট্রি শিল্পের উপকরণের ওপর কর রেয়াত দেওয়া প্রয়োজন। কৃষি খাতের মতো পোলট্রি শিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। কৃষিতে যেমন ভর্তুকি দেওয়া হয়, তেমনি প্রাণিসম্পদ শিল্পে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন।

আমাদের দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশি গরুর জাতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আমাদের দেশীয় গরুর জাত যেমন চিটাগাং ক্যাটেল, মুন্সিগঞ্জ ক্যাটেল এই জাতগুলোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করতে হবে। প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বণ্টন–প্রক্রিয়া অন্যান্য খাতের চেয়ে ভিন্ন ও জটিল।

এ প্রক্রিয়া সমন্বিতভাবে গড়ে তুলতে না পারলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। নতুন রোগ উদ্ভবের সৃষ্টি হবে। এর ফলে শিল্পটি হুমকির মুখে পড়বে। তাই এ খাতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ খাতের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে একত্রে সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের জন্য আমাদের উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষাগারের সুবিধা নিয়ে যেতে হবে। কারণ এখন যত চিকিৎসা হচ্ছে এবং যত অ্যান্টিবায়োটিক ও টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, সবই হচ্ছে অনুমানের ওপর নির্ভর করে।

মুহিব্বা তানজুম
শিক্ষার্থী: ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার অনুষদ, ৭৯তম ব্যাচ

মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এবং ইলিশ রক্ষায় সফলতা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ কমছে এবং কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি অনেকটা নিঃশেষ হতে চলেছে। নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর মৎস্যশূন্য হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসেব না থাকা আর কী পরিমাণ মাছ ধরা যাবে তারও নির্দিষ্ট সীমা পরিসীমা নির্ধারিত নেই। তাই মিঠা পানির মৎস গবেষণার পাশাপাশি সমুদ্র গবেষণায় জোর দিতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের এসডিজি-১৪ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে স্থলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি আমাদের পানির তলদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ব্যাপারেও সচেতন থাকা জরুরি।

রোকনুজ্জামান রকি
শিক্ষার্থী: এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, ৭৬তম ব্যাচ

কৃষিপণ্য উৎপাদন শেষে পণ্যের মূল্য পাওয়া কৃষকদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। মৌসুমে ফসলের দাম কম থাকে, অন্যদিকে অফ সিজনে কৃষিপণ্যের দাম অত্যধিক থাকে। এতে করে কৃষির মূল উৎপাদনকারী কৃষক প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এটি সমাধানে অঞ্চলভিত্তিক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রপ জোনিং গড়ে তুলতে হবে।

নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো ও বিপণনের লক্ষ্যে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের সাম্প্রতিক বাস্তবায়িত অনলাইন মার্কেটে অধিকসংখ্যক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোগী কৃষকদের নিয়ে ফসলভিত্তিক কৃষক গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে।

এসব কৃষক গ্রুপকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এসব কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের সুযোগ করে দিতে হবে। রাজধানী শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী, সুপারশপ ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও সঠিক দাম প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ