এমআইএসটি দিয়ে শুরু হচ্ছে উচ্চশিক্ষার ভর্তিযুদ্ধ

  © ফাইল ছবি

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। উচ্চমাধ্যমিকের এই ফল বের হতে না হতেই শুরু হয়েছে উচ্চশিক্ষার ভর্তি যুদ্ধ। ফল ঘোষণার দু’দিন পর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের (বিইউপি) অধিভুক্ত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৮ মার্চ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এবার এইএসসিতে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন রেকর্ড ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। অন্যদিকে, এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন রয়েছে ৫৫ হাজারের মতো। ফলে উত্তীর্ণ হওয়া উচ্চমাধ্যমিকের এসব শিক্ষার্থী তো দূরের কথা ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক পেয়েও অনেকেই ভর্তি হতে পারবেন না পছন্দের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়তে না পারলেও এবার উচ্চশিক্ষায় কোন আসন সংকট হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে, আগামী ১ এপ্রিল দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২২ এপ্রিল ডেন্টাল কলেজের বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতমাসের শেষের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা শিগগির প্রকাশ হবে। সেখানে চূড়ান্ত তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ হলে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

তথ্য মতে, দেশের ৩৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি) সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে একাধিক সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ। এসব ঘিরেই মূলত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আগ্রহ। এসব প্রতিষ্ঠানে ৫৫ হাজারের বেশি আসন রয়েছে বলে জানা গেছে।

এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

অন্যদিকে, ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৭টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে গতবারের ন্যায় গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নিতে পারে।

তাছাড়া পলিটেকনিক থেকে পাস করা ডিপ্লোমাধারী ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। 

বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। আর চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী) স্নাতকোত্তর সমমানের শিক্ষা দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে। জানা গেছে, পরীক্ষার সিলেবাস, ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দিনক্ষণ, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার ইস্যুসহ ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। এছাড়া ‘ঘ’ ইউনিটের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বৈঠকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।

এদিকে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নীতিনির্ধারকরা তাদের স্ব স্ব ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে শিগগির একাডেমিক/ভর্তি কমিটির বৈঠকে বসবেন। এতে ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণে আলোচনা করে পরবর্তীতে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এবার রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেও উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসন সংকট হবে না মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখান থেকে কেউ উচ্চশিক্ষায় যাবেন, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, কেউ এখনই কাজে চলে যাবেন। কেউ কারিগরি শিক্ষায় যাবেন। আমাদের একেবারেই মনে হয় না, আসন সংকট হবে।

“আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেখানে এবং যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে এবং অন্যান্য যে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোতে… সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের অনেক কলেজ আছে দেশে।”

প্রায় আড়াই হাজার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোথাও কোথাও অনার্স-মাস্টার্সও হয়। সেখানে তাদের ভর্তি করা যাবে। আমরা প্রতিবছরই দেখি, অনেক সিট আসলে খালি থেকে যায়। কাজেই কোনো আসন সংখ্যার সমস্যা হবে না।”


সর্বশেষ সংবাদ