প্রতীকী ছবি © সংগৃহীত
চীনের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম জিভ, যা মানুষের মতো স্বাদ শনাক্ত করতে এবং তা মনে রাখতে পারে। এই নতুন প্রযুক্তি শুধু স্বাদ শনাক্তকরণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি স্বাদ সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণও করতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এটি খাদ্য নিরাপত্তা, পানির গুণমান পরীক্ষা, রোগ শনাক্তকরণ এবং এমনকি স্বাদ অনুভব করতে অক্ষম ব্যক্তিদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই কৃত্রিম জিভে ব্যবহৃত গ্রাফিন অক্সাইড মেমব্রেন স্বাদের জন্য দায়ী আয়নগুলো শনাক্ত করে। পাতলা স্তরের এই ‘আণবিক ছাঁকনি’ আয়নের প্রবাহ ধীর করার মাধ্যমে প্রতিটি স্বাদকে চিহ্নিত করে এবং মনে রাখে। এর ফলে মিষ্টি, টক, লবণাক্ত ও তেতো স্বাদ প্রায় ৭৩ থেকে ৮৮ শতাংশ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা যায়। কফি বা কোকাকোলার মতো জটিল পানীয়ের ক্ষেত্রে এ নমুনা শনাক্তের নির্ভুলতা প্রায় ৯৬ শতাংশ।
এর আগে তৈরি কৃত্রিম জিভগুলো কেবল স্বাদ শনাক্ত করতে পারত। তাতে প্রাপ্ত তথ্যকে বাইরের কম্পিউটারে পাঠিয়ে বিশ্লেষণ করতে হতো। তবে নতুন এই প্রযুক্তি তরল পরিবেশে স্বাদ শনাক্ত ও তথ্য বিশ্লেষণ দুটোই করতে পারে। এছাড়া এটি ধাপে ধাপে শেখে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্বাদের ‘স্মৃতি’ গড়ে তোলে।
প্রযুক্তিটি কাজ করছে অত্যন্ত পাতলা চ্যানেলের মাধ্যমে, যা মানুষের চুলের চেয়ে হাজারগুণ পাতলা। এখানে আয়নের গতি ৫০০ গুণ ধীর করে দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিটি স্বাদ শনাক্তের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। স্বাদের স্মৃতি মিলিসেকেন্ডের বদলে প্রায় ১৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম জিভ প্রতিবার নতুন স্বাদে সংস্পর্শে আসার পর তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে শেখে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের ক্ষমতা আরও নিখুঁত হয়। চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ন্যানোসায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ইয়ং ইয়ান বলেন, “আমাদের যন্ত্র তরলে কাজ করতে পারে, পরিবেশ বুঝতে পারে এবং তথ্য প্রক্রিয়াও করতে পারে—যেমন মানুষের স্নায়ুতন্ত্র।”তিনি আরও বলেন, “যদি উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা যায়, শক্তি খরচ কমানো যায় এবং একাধিক সেন্সর একসাথে কাজ করতে পারে, তবে আগামী এক দশকের মধ্যে এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, রোবটিক্স ও পরিবেশ বিশ্লেষণে বিপ্লব ঘটাবে।”
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স