প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৩য় সমাবর্তন © টিডিসি সম্পাদিত
ঢাকার ব্যস্ততার মাঝেই আজ যেন অন্য রকম এক সকাল। এমন সকাল বারবার আসে না। আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র আজ যেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্নে রঙ ছড়ানো এক উদযাপনস্থল। শত শত তরুণ-তরুণীর চোখে মুখে ঝলমল করছে স্বপ্নের আলো। কারো হাতে ক্যাপ, বুকে সোনালি ব্যাচ, সবাই যেন এক ছাতার তলে দাঁড়িয়ে নতুন এক জীবনের প্রথম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
সকাল থেকেই চলেছে ব্যস্ততা। কেউ গাউনে বোতাম লাগাচ্ছেন, কেউ টুপির ভাঁজ ঠিক করছেন, কেউ আবার বন্ধুকে ব্যাচ পরিয়ে দিচ্ছেন। এতদিনের পড়ালেখা, সংগ্রাম আর অপেক্ষার পর অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন; প্রাইম ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন।
সম্মেলন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে পা রাখলেই দেখা যায় উৎসবের রঙ। একদল গ্র্যাজুয়েট সেলফি তুলছেন, আরেকদল পুরো ব্যাচকে এক ফ্রেমে বন্দি করতে ব্যস্ত। হাসির মাঝে ক্যামেরার ক্লিক–ক্লিক শব্দ যেন দিনের প্রথম সংগীত।
উচ্ছ্বসিত এক গ্র্যাজুয়েট হাসিমুখে বললেন, আজকের প্রতিটা মুহূর্ত আমি ধরে রাখতে চাই। আমার মা-কে দেখানোর জন্যই এত ছবি তুলছি!
পুরো সম্মেলনস্থল যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। দুই বছর, তিন বছর পর বা তারও বেশি সময় পরে বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রথম দিনগুলোতে।
মো. সাইফুল্লাহ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ডিপার্টমেন্ট ৪৪ ব্যাচের এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি খুবই উচ্ছ্বাসিত। ২০২০ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে হতে পেরে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আবার ফিরে পেলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না, উপযুক্ত দক্ষতা ও কর্মদক্ষতা অর্জনই দেশের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ করছি, কিন্তু আমাদের কর্মক্ষেত্র নেই। আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ করছি, কিন্তু উপযুক্ত দক্ষতা এবং উদ্যোগী হয়ে উঠছি না। এর ফলাফল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়ার কথা ছিল এবং যে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। কারণ এর মধ্যে মানবিক তৃপ্তির অভাব রয়েছে।’
উপদেষ্টা গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা আপনাদের অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা সমাজ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন।’
প্রাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী দীন মোহাম্মদ খসরু বলেন, ‘আজকের এই দিনটি প্রাইম ইউনিভার্সিটির জন্য এক স্মরণীয় অধ্যায়। আজ আপনারা যারা সাফল্যের মুকুট পরে নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন। আপনাদের এ অর্জন শুধু আপনাদের নয়, আপনাদের এই অর্জন বয়ে আনবে আপনাদের পরিবার ও দেশের জন্য অপার গর্ব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে শিক্ষাব্যবস্থাকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের দ্রুত যে পরিবর্তন ঘটছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে উদ্ভাবন ও উৎকর্ষের প্রাণ কেন্দ্র। আর এর মধ্যেই আমরা রূপান্তরের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আজ আপনারা যে সনদ অর্জন করলেন তা কেবল একটি কাগজের টুকরো নয়, এটি হলো পরিবর্তনের শক্তি। আপনারা শুধু প্রাইম ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি নয়, আপনারা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। আপনারা যেখানেই যাবেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ, উদ্ভাবনমূলক ক্ষমতা এবং দেশপ্রেমের চেতনা আপনাদের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, ভালোবাসবেন মাতৃভূমি এবং মানুষকে।’
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম. শামসুল আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আনোয়ার কামাল পাশা, প্রফেসর ড. রকিবুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আবদুর রহমান, প্রফেসর ড. রশিদুল হাসান ও প্রফেসর ড. নূর মোহাম্মদ।