তিন তরুণীকে পার্টিতে ডেকে নৃশংসভাবে খুন, উত্তাল আর্জেন্টিনা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ AM
তিন তরুণীকে হত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ চলছে

তিন তরুণীকে হত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ চলছে © আনন্দবাজার

৩০০ ডলার দেওয়ার লোভ দেখিয়ে রেভ পার্টিতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিন তরুণীকে। তারপর থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তারা।  পরে একটি বাড়িতে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাটি ইনস্টাগ্রামে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল বলেও দাবি। ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে উত্তাল হয়ে উঠেছে আর্জেন্টিনা। শনিবার বুয়েনস এইরেসের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর বুধবার দক্ষিণ উপশহরের একটি বাড়ির উঠানে ২০ বছরের মোরেনা ভার্দি ও ব্রেন্ডা দেল ক্যাস্টিলো এবং ১৫ বছর বয়সী লারা গুতেরেসের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িতরা ইনস্টাগ্রামে লাইভে এসে নৃশংস হত্যাগুলি সংঘটিত করেন। একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ৪৫ জন সদস্য এটি দেখেছিলেন, বলেও জানা যায়। অভিযোগ উঠেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর টাকার লোভ দেখিয়ে তিন জনকে ভ্যানে তোলা হয়। বুয়েনস এইরেসের উপকণ্ঠে একটি বাড়িতে সেক্স পার্টিতে অংশ নেওয়ার জন্য ৩০০ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করে তিন জনকে ডেকে আনা হয়। টাকার পরিবর্তে মাদক পাচারকারীরা তাঁদের ধরে রেখে নির্যাতন চালায়। তাদের চরম শাস্তি দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য।

তদন্তকারীদের মতে, মাদক পাচারকারীরা শাস্তি এবং প্রতিশোধ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল। অভিযোগ, মৃত তিন জনের এক জন মাদক চুরি করেছিলেন। ভিলা ১-১১-১৪ নামে পরিচিত এলাকার কুখ্যাত মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীর নেতা ও ডিলারের থেকে এক প্যাকেট কোকেন চুরি করে এনেছিলেন তিন জনের এক জন। বুয়েনস এইরেসের নিরাপত্তা মন্ত্রী হাভিয়ের আলোনসো সাংবাদিকদের জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মাদক পাচারকারীরা একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সেটি হলো, মাদক চুরির দুঃসাহস দেখালে ভবিষ্যতে এ দশাই হবে। একটি ফুটেজে সেই কথাই বলতে শোনা যায় দলের এক নেতাকে।

গণমাধ্যম জানিয়েছে, নির্যাতনকারীরা তিন তরুণীর নখ উপড়ে, আঙুল কেটে ফেলেছে। তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তারপর প্লাস্টিকের ব্যাগে পুঁতে ফেলে। হত্যাকাণ্ডের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য কয়েক জনকে ভাড়া করে আনা হয় বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় হিংস্রতার মাত্রা অবাক করেছে পুলিশকেও। লারাকে হত্যার আগে বাঁ হাতের পাঁচটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছিল। ব্রেন্ডার খুলি ভেঙে দেওয়া হয়। পেট কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। মোরেনার মাথার ওপর প্লাস্টিকের ব্যাগ আটকে দেওয়া হয়, যাতে শ্বাসরোধে মারা যান তিনি।

ভাড়া করা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মধ্যে পাঁচ জনকে পুলিশ আটক করেছে। এর মধ্যে দু’জন নারী। এক জন সন্দেহভাজনকে মরদেহ বহন করার জন্য গাড়ি দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। হত্যার নেপথ্যে মূল চক্রকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ২৭ বছর বয়সী অভিযুক্ত পেরুর বাসিন্দা ও দলনেতা। ঘটনার আঁচ ছড়াতেই গা ঢাকা দেন দলের ওই চাঁই। অভিযোগ, চুরির শাস্তি কী হতে পারে তা দলের সদস্যদের দেখাতে লাইভস্ট্রিমের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কর্তৃপক্ষের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের পরপরই আর্জেন্টিনা থেকে পালিয়ে যান তিনি। তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ব্রেন্ডা ও মোরেনার স্বজন ফেডেরিকো সেলেবন এএফপিকে জানিয়েছেন, তরুণীরা মাঝে মধ্যেই আনন্দ উপভোগ করতে মাদক সেবন ও যৌনকর্মে লিপ্ত হতেন। সব চলতো পরিবারের অজান্তেই। তবে তারা ভুল সময়ে ভুল সঙ্গে জড়ান। ১৫ বছরের মৃতার স্বজন ভ্যালে গ্যালভান মাদক সেবন ও যৌনবৃত্তির সঙ্গে তার যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে মাদক মাফিয়াদের দাপাদাপি প্রবল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একাংশ বুঁদ হয়ে থাকেন কোকেন, চরস, মারিজুয়ানায়। কারবার ও নেশায় ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। মর্মান্তিক এ হত্যার বিচার চেয়ে শনিবার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। নৃশংসতা দেখে শিউরে উঠেছেন নাগরিকেরা।

আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে ভারতের জয়, পাকিস্তানকে খোঁচা দিয়ে মোদির স্ট্যাটাস

মেক্সিকো, কলম্বিয়া এবং ইকুয়েডরের মতো দেশগুলোয় মাদক মাফিয়াদের অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতার যে প্রমাণ পাওয়া যায়, তার সঙ্গে আর্জেন্টিনার মতো দেশ অভ্যস্ত নয় বলে দাবি মানবাধিকার সংগঠন ও মাদকবিরোধী সংগঠনের। এর অর্থ দেশের অন্ধকার জগতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে এবং অপরাধীরা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। দারিদ্র্য এবং সরকারি পরিষেবা হ্রাসের ফলে মেসি-ম্যারাডোনার দেশের তরুণ প্রজন্ম বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন মাদক চোরাকারবারিরা। বিশাল এলাকায় মাদক মাফিয়ার করুণার ওপর বেঁচে রয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। শিশু-কিশোরদের জীবনে অনুপ্রবেশ করে তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে মাফিয়ারা, এমন দাবি মানবাধিকার সংগঠনের।

মৃত দুই তরুণীর ভাই আন্তোনিও দেল ক্যাস্টিলো কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, মাদক পাচারকারীরা তাঁর বোনদের সঙ্গে যা করেছে, তা ভয়ঙ্কর বললেও কম হবে। ব্রেন্ডার বাবা লিওনেল দেল ক্যাস্টিলো বিক্ষোভে এসে জানান, তার মেয়ের ওপর এতটাই নির্যাতনের করা হয় যে, মরদেহ শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেননি। মা বলেন, ‘ওরা আমার মেয়ের সঙ্গে যা করেছে, আমি চাই সবাই এর প্রতিশোধ নিক।’ ইনস্টাগ্রামের মূল সংস্থা মেটা তাদের প্ল্যাটফর্মে লাইভস্ট্রিম হওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়নি। এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইনস্টাগ্রামে লাইভ হওয়ার প্রমাণ তারা পাননি। এ ভয়াবহ অপরাধের তদন্তে মেটা ও ইনস্টাগ্রাম আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করবে বলে এএফপিকে জানিয়েছে। খবর: আনন্দবাজার।

আল্লাহর পরিকল্পনায় ধানের শীষের জোয়ারের বিপক্ষে লড়তে হচ্ছে: …
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
গণতন্ত্র কোনো চূড়ান্ত গন্তব্য নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া:…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সুপারিশের তিন মাসেও হয়নি গেজেট, পদায়নবঞ্চিত ৩৫০০ চিকিৎসক
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি দল
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তর-পিএইচডির সুযোগ,…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে, আরও আলোচনা বাকি আছে: মঞ্জু
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫