শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

সাঁতার জানতেন না ঢাবি ছাত্র জাবের, প্রথম নৌযাত্রাতেই নিখোঁজ

আবদুল্লাহ আল জাবের
আবদুল্লাহ আল জাবের  © সংগৃহীত

পরিবারের বড় সন্তান আবদুল্লাহ আল জাবের (৩০) সাঁতার জানতেন না। সেই ভয়ে নৌপথের যাত্রা এড়িয়ে চলতেন তিনি। এক্ষেত্রে বাবা-মায়েরও এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই জাবেরই গতকাল রবিবার (২০ মার্চ) প্রথমবারের মতো লঞ্চে চড়ে মুন্সিগঞ্জ ঘুরতে গিয়ে লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন।

জানা যায়, গতকাল দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আশরাফ উদ্দিন-২।

নৌপুলিশের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী ওই যাত্রীবাহী লঞ্চে সে সময় অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে । যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন অন্তত ৩ জন। তাদের মধ্যে জাবেরও একজন।

লঞ্চডুবির এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। আজ সকাল পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ২ শিশুসহ ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যার পর আলোর অভাবে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি স্থগিত রাখা হলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লঞ্চটি টেনে তোলার কাজ শুরু হয়।

আজ সোমবার (২১ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লঞ্চটি টেনে তুলে বন্দর থানার কাশিপুর খালের উত্তর পাড়ে আলামিননগর এলাকায় রাখা হয়। তবে লঞ্চের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে নতুন করে কোনো লাশ মেলেনি।

জানা যায়, জাবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলে। বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।

তার নিখোঁজের বিষয়টি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন জাবেরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল।

জাবেরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আরেক বন্ধু ও আরবি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, চার বন্ধু মিলে অবসর সময়ে লঞ্চে করে ঘুরতে মুন্সীগঞ্জে যাচ্ছিলেন জাবের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যায় সেই লঞ্চ। এমন সময় জীবন বাঁচাতে নদীতে লাফিয়ে পরেছে। অনেকেই সাঁতার কেটে তীরে উঠেছে।তার সহযোগী তিন বন্ধু সাঁতার কেটে তীরে এসে বেঁচে যান। কিন্তু জাবের জানতেন না কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়। যার ফলে অসংখ্য প্রাণের নিখোঁজের কাতারে তাকে শামিল হতে হয়।

আবদুল্লাহ আল জাবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন রাজধানীর ডেমরার দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে। চাকরির পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিয়োজিত ছিলেন বলে জানান তার বন্ধু আশরাফুল।

জাবেরের মামা এস কে জামির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ৩ বন্ধুর অনুরোধে জাবের তাদের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জ ঘুরতে যাচ্ছিল। টার্মিনাল ঘাট থেকে লঞ্চে উঠে এটুকু পথ আসতেই কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। ওইসময় ৩ বন্ধু সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও জাবের পারেনি। বিকেলে জাবেরের বন্ধুরা ফোন করে এই ঘটনা তার পরিবারকে জানায়।

সাঁতার না জানায় জাবেরকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে তার মামা আরও বলেন, অন্তত লাশটা পাওয়ার জন্য রাত থেকেই অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো পেলাম না।

জামির চৌধুরী আরও জানান, বাড়িতে জাবেরের স্ত্রী ও মা কান্নাকাটি করছেন। কেউ তাদের সান্ত্বনা দিতে পারছে না।


সর্বশেষ সংবাদ