টাকার বিনিময়ে হলের সিট বিক্রি রাবি ছাত্রলীগের, কথোপকথন ফাঁস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের লোগো
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের লোগো  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আসবাসিক হলে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এক-দুই-তিন কিংবা চার সিটের কোন কক্ষ বাদ যাচ্ছে না। ফলে কক্ষভেদে শিক্ষার্থীদের গুণতে হচ্ছে তিন থেকে নয় হাজার টাকা। যা গত বছরের ১৭ অক্টোবর মাসে হল খোলার পর চরম আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি এক হলের ডাবল কক্ষ নিয়ে সিট বাণিজ্যের কথোপকথনের রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। হলে সিট প্রত্যাশী এবং ছাত্রলীগকর্মীর সেই কথোপকথনে স্পষ্ট হয়েছে, পদহীন কর্মীদের দ্বারা সিট বাণিজ্য করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এক মিনিট ১৯ সেকেন্ডের সেই কথোপকথনে হলে সিট প্রত্যাশী শিক্ষার্থী আরেকজনকে বলছেন, একটি ডাবল সিটের কক্ষের জন্য তিনি জয়ন্তকে (পদহীন ছাত্রলীগকর্মী) সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: পরকীয়ার জেরে খুন, জেলহাজতে রাবি ছাত্রলীগ নেতা

এরপর অন্যজন বলছেন, ‘সাড়ে ৭ হাজার টাকা যাক আরামে থাকতে পারবা। টাকাটা জয়ন্ত নিয়ে মনে হয় বৃত্ত দাদাকে (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি) দিয়েছে। টাকা তো সাড়ে ৭ হাজার জয়ন্ত একা নেবে না। বড়জোর পাঁচশ থেকে ১ হাজার টাকা জয়ন্ত রাখবে আর বাকিটা...।’ কথার মাঝে সিট প্রত্যাশী শিক্ষার্থী বলেন, ‘বৃত্ত দাদার কাছে সবসময় লিস্ট থাকে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথোপকথনে বলা জয়ন্তর পুরো নাম জয়ন্ত রায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং রাবির আসন্ন ১৪ মার্চের হল সম্মেলনে মাদার বখ্শ হলের একজন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। আবার কথোপকথনে বৃত্ত দাদার পুরো নাম সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত। তিনি বিশ্ববিদধ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। দুজনেই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী।

একাধিক সূত্রের তথ্য বলছে, বেশ কিছুদিন যাবত জয়ন্ত রায় সিট বাণিজ্যের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে আসছেন। শুধু মাদার বখ্শ হলেই নয়, অন্যান্য হলেও সিট বাণিজ্য করেন তিনি। সিট বাণিজ্যের কিছু টাকা তার পকেটে রেখে বাকিটা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তর কাছে জমা দেন।

তবে এই বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করছেন জয়ন্ত রায়। তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ এটা করেছে। আমি কাউকে হলে উঠাই না। আমার হলে কোন দায়িত্বও নেই। আমার কোনো শত্রু বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে কেউ এটা করেছে।’

আরও পড়ুন: অসহায় শিক্ষার্থীর পাশে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো নাম আমি বলতে পারব না। এগুলোর সঙ্গে আমি যুক্ত হব কেন! এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা তথ্য।’

অন্যদিকে সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমি জানি না। ১৫ থেকে ২০ দিন যাবত আমি ক্যাম্পাসের বাইরে। আমি কথা বলে দেখব কে কি করছে।’

হলে হলে সিট নিয়ন্ত্রন করার লিস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক না, হলে ছাত্রলীগের কে কোন রুমে থাকে সে বিষয়ে জানি। আমাদের কর্মীদের লিস্ট জানা আছে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টি যদি হয়ে থাকে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ করব।’ কর্মীদের দ্বারা সিট বাণিজ্য করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরকম তথ্যটি আমার মনে হয় ভিত্তিহীণ।’