মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে খুবি কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ

  © টিডিসি ফটো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জিরোপয়েন্ট-গল্লামারী সড়কে চার লেনের রাস্তা সংস্কারের কাজ চল। ইতিমধ্যে কাছেজের অগ্রগতি ৬০ % শেষ হয়েছে । দূরপাল্লার চার চাকার গাড়ি বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, লরি, কাভার্ডভ্যান ইত্যাদি ভারী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলছে।

যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরী ভিত্তিতে মেইন গেটের সামনে, গল্লামারি বাজার রোডের সামনে ফুটওভার ব্রিজ, জেব্রা ক্রংসি,রোড ক্রংসিং সিগন্যাল, সর্তকবার্তা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে খুবি কর্তৃপক্ষ। রাস্তা পার হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দূর্ঘটনার ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। যেকোন মূহুর্তে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে অতিসত্ত্বর গতিরোধক (স্পিডব্রেকার) ও ওভারব্রিজ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সর্তক হয়েছেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি জরুরি চিঠি প্রেরণ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট সংলগ্ন চার লেনের রাস্তার কাজ চলমান। সড়কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই সড়কে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী, অ্যাম্বুলেন্সসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ২০০ গাড়ী চলাচল করে। কিন্তু প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের শতশত গাড়ি অতি দ্রুতগতিতে চলার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে মেইন গেটটি অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে যা শিক্ষার্থী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এছাড়া সড়কটিতে নির্মাণাধীন আইইআর ভবন, মেডিকেল সেন্টার ও রাস্তার বিপরীত পার্শ্বে সরকারি দেলদার আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় সেখান দিয়েও প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী রাস্তা পারাপার হয়। উক্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে একটি, নির্মাণাধীন আইইআর ভবন ও মেডিকেল সেন্টারের সামনে একটিসহ মোট দু’টি গতিরোধক এবং একটি ওভারব্রিজ অতিসত্ত্বর নির্মাণ করা প্রয়োজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনের রাস্তা,গল্লামারী বাজার রোডের সামনের চিত্র একই। রাস্তা পার হতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থী ও অনান্যরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীতে ছাত্রদের তুলানায় ছাত্রীরা মেস বাসাগুলো ভাড়া করে থাকেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে রাস্তা পার হতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।অথচ রাস্তায় কোন ধরণের সর্তক বাতা ও নেই।

এখানে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের কথা থাকলেও এখনোও এটার টেন্ডারই হয়নি।কাজ শেষ না হলে জেব্রা ক্রংসি,রোড ক্রংসিং সিগন্যাল, সর্তকবার্তা দেওয়া যাচ্ছে না। এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬০% শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ শেষ হবে জুনের মধ্যে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর ।অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আগামী ০৫ মাসের মত এমন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হবে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ময়লাপোতা মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল।প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বাংলা ডিসিপ্লিনের ফারহানা নাজ বন্নি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীতে আবাসিক এলাকাগুলোতে থাকে। রাস্তা দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি এবং ভারী পণ্যবাহী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে চলে। রাস্তা পারাপারের সময় প্রতিনিয়ত তাদেরকে ঝুঁকি নিতে হয়। প্রশাসনের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করা কারণ সবার আগে জীবন।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, মহাসড়কটির এই অংশে যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘবে প্রথম স্তর কার্পেটিং করা হয়েছে। আরও দুটি লেয়ার বসার পর সড়কটির কাজ আংশিক শেষ হবে। গতিরোধক ও ওভারব্রিজের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমার সাথে ইতোমধ্যে কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের পত্রের ব্যাপারে অবহিত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। উপাচার্যের সাথে সড়কটি দৃষ্টিনন্দনসহ ওভারব্রিজ, ওয়াকওয়ে নির্মাণের বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ও ডিজাইন অনুযায়ী সকল কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জিরোপয়েন্ট থেকে গল্লামারী অংশে যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘবে প্রথম স্তর কার্পেটিং দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে ডিভাইডার নির্মাণকাজ চলছে। ওভারব্রিজের ডিজাইন চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। এরজন্য আলাদা প্রায় ৪ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ অনুমোদন হলে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কের এ অংশের নির্মাণকাজের এখনও অনেক পর্যায় বাকি। এই মুহূর্তে গতিরোধক দেওয়া কঠিন। তাহলে আবার তা ভাঙতে হবে। বারবার ভাঙতে হলে রাস্তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে আপাতত পারাপারের সুবিধার জায়গায় জেব্রা ক্রসিং মার্ক, গল্লামারী ও জিরোপয়েন্টে গতিসীমা বিষয়ক দু’টি সাইনবোর্ড স্থাপন করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যেহেতু মহাসড়কের এই অংশ এখন চার লেন তাই চলাচলে সুবিধা হয়েছে। যানবাহন একমুখী হচ্ছে না। ফলে সে অর্থে দুর্ঘটনার প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার কথা। তবে জিরোপয়েন্ট এবং গল্লামারীতে ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও কমবে।


সর্বশেষ সংবাদ