জাবির আবাসিক হলে বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবা কবে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

প্রায় দীর্ঘ দেড় বছর পর গত ১১ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হলেও গত ২১ অক্টোবর থেকে হাইব্রিড মোডে (সশরীরে ও অনলাইনে) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম করতে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করছেন বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সেবা।

প্রতিমাসে ৫০০-১০০০ টাকা পরিশোধ করলেও ভালো ইন্টারনেট সেবা পান কদাচিৎ, সিম অপারেটর গুলো থেকে ডাটা প্যাকেজ কিনতে গেলেও বাড়তি টাকা খরচ ছাড়াও ইন্টারনেট সেবার দূর্ভোগ তো আছেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবার দাবিতে সোচ্চার হলেও এখনো মেলেনি কাঙ্ক্ষিত সেবা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড (বিটিসিএল) ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) কর্তৃক বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এই সেবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসমূহ ছাড়াও বিভাগগুলোতে, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে এবং শিক্ষকদের কোয়ার্টারগুলোতেও এমনকি প্রভোস্ট অফিসেও সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও আবাসিক হলগুলোতেও সংযোগ দেবার মত যথেষ্ট প্যাকেজ তাদের রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: জাবি ৪৯ ব্যাচের ক্যাম্পাস ভাবনা

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং আবাসিক হলে বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবা থাকলেও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত জাবি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দ্রুততার সাথে তাদের এ দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলোতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেবে।

ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী ও মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান শুভ বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই অগ্রগতির ধারায় শিক্ষার্থীদের নানা কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের ওয়াইফাই বাবদ প্রতিমাসে বিল দিতে হচ্ছে অথবা উচ্চমূল্যের ডাটা প্যাকেজ ক্রয় করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। অবিলম্বে আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত স্পিডের ফ্রি ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: ৪-৫ মাসের সেশনজটে আছি: জাবি প্রক্টর

জাহানারা ইমাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া হোসেন বলেন, হলগুলোতে আমরা যে ওয়াইফাই ব্যবহার করি তাতে অনেক সমস্যা। এদিকে ডাটা অপারেটর থেকে ডেটা কিনলেও তাদের সেবা খুবই বাজে। আমি মনে এর একটিই সমাধান হতে পারে, সেটি হল গড়িমসি না করে হলগুলোতে দ্রুততার সাথে ইন্টারনেট সেবা দেয়া।

শিক্ষার্থীদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় সকল ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা সবাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: জাবি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, সাক্ষাৎকারে এসে আটক আরও ১

আল বেরুনী ছাত্রলীগের নেতা এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। আমি মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলোতে ফ্রি ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনবে। অনেকের টাকা দিয়ে ইন্টারনেট সেবা নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এজন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে, এই মহৎ উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনলাইন ও অফলাইন দুই মোডেও শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, সেহেতু অন্তত সেজন্যে হলেও প্রশাসনের উচিৎ প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদান করা। অথচ দীর্ঘ বন্ধ শেষে হলে ফিরে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় গতির ইন্টারনেট তো পাচ্ছেই না, উল্টো হলে হলে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জহির ফয়সাল বলেন, আমার জানা মতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী ওয়াইফাই সেবা ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি ৫ এমবিপিএস ডাটা সেবা ৫০০ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করলেও পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেনা। অনেকেরই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চলমান, এমন অবস্থায় এরকম সেবার কারণে বিঘ্নতার সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জাবি ‘সি’ ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিমূলক টিপস

এ ছাত্র নেতা আরও বলেন, প্রশাসনকে আহবান করছি, প্রত্যেক হলে ও ক্যাম্পাসে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু করা হোক। এতে করে শিক্ষার্থীরা গতিশীল ডাটা সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার বিঘ্নতা কাটাতে সক্ষম হবে। ডিজিটালের সাথে তাল মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড ডাটা সার্ভিস এরিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক শোভন রহমান বলেন, লকডাউন চলাকালীন সময়ে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে উচ্ছ্বাসের সাথে বলেছিল দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে। অথচ সে সময় অনেক শিক্ষার্থীকেই অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মাইলের পর মাইল পারি দিয়ে স্পিড পায় এমন স্থানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এখন আবাসিক হল খোলা হয়েছে। একটা ডিজিটাল দেশের একটি অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করবে, এটাই কাম্য ছিল।

তিনি আরো বলেন, করোনার পরে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ব্লেন্ডেড মোডে, অর্থাৎ অনলাইন অফলাইন দুই ভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিমাসে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে বাইরের আইএসপি প্রোভাইডারের কাছ থেকে নিম্নমানের ইন্টারনেট সংযোগ নিতে হচ্ছে। এর বাইরে হলগুলোতে ক্ষমতাসীনদের আইএসপি প্রোভাইডারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, ফ্রি ওয়াই-ফাই কানেকশন দাবি, সেগুলো নিয়ে বিবাদ সবসময় লেগেই আছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময়ই প্রস্তুত আছি সবধরনের সহযোগিতা করতে। এজন্য রাউটারসহ কিছু সামগ্রী প্রয়োজন সে বিষয়ে হল প্রভোস্টদেরকে বলা হয়েছে। এগুলো পেলে যেকোন সময় বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে।

তবে প্রাধ্যক্ষদের কেউ আশ্বাস দিলেও অন্যরা দোষ দিচ্ছেন আইসিটি সেলকে, অভিযোগ করছেন তাদের নিয়মিত ইন্টারনেট সেবার মান নিয়ে।

প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের দেয়া সচরাচর ইন্টারনেট সেবা আমরা ঠিকমত পাই না। সেখানে এত শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট সেবা চালু করতে গেলে ভেবে দেখা প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।

তবে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আইসিটি সেলের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা অনেক বড় একটা বাজেটের বিষয়। তারপরও আমি একটা কমিটি করেছি। তারা এটার ফিজিবিলিটি দেখবে।

শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যেের ইন্টারনেট সেবা আমার অন্যতম অগ্রাধিকার। এজন্য একটি নোট ইতোমধ্যে কোষাধ্যক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি। আশা করি শিগগিরই কিছু একটা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিটি সেলের এক কর্মকর্তা জানান, পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় টাওয়ার ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাও চালু করা সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ