স্বপ্ন পূরণের তাগিদে ঢাবির ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ঈদ আনন্দ বিসর্জন
- এম এইচ ইমরান, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৬ PM , আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৫ AM

যখন ঢাকাবাসী ‘স্বপ্ন টানে বাড়ি আমার’ গানের সুরে গুণগুণ করতে করতে চেনা গ্রামমুখী হচ্ছে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫ শতাধিক স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থী নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়ার টেবিলে ডুবে আছেন। আগামী ৮ মে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এবং ২৭ জুন ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিসিএস, একাডেমিক পরীক্ষা ও ছাত্ররাজনীতির কারণে এবারও অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করবেন। পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য তারা এই আনন্দ সাময়িক বিসর্জন দিচ্ছেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী মো. সাকিম, যিনি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার কারণে বাড়ি যাচ্ছেন না, বলেন, মা-বাবার সঙ্গে ঈদ কাটানোর ইচ্ছা থাকলেও পরীক্ষার জন্য সেই আবেগকে দমিয়ে রাখতে হয়েছে। সামনের কোনো এক ঈদে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করার আশায় এই আত্মত্যাগ করেছি।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন, আমার পরিবার ঢাকায় থাকলেও পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের সঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এবারই প্রথম পরিবার ছাড়া ঈদ কাটাবো। সুযোগ পেলে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাব।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বিল্লাল বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গ্রামে না গিয়ে হলে ঈদ করবেন। তিনি বলেন, প্রতিবার গ্রামে ঈদ করি, ইনশাআল্লাহ সামনেও করবো। কিন্তু এবার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ক্যাম্পাসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে আরও আনন্দঘন ঈদ উদযাপন করতে পারি।
শুধু বিল্লাল হোসেনই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে এরকম ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা ঈদ হলেই কাটাবেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঈদের সাময়িক আনন্দ বিসর্জন দিচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ১২জন, অমর একুশে হলে ১০ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ১০, স্যার এ এফ রহমান হলে ৬০, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭, শেখ মুজিব হলে ২৩, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১৭, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১০০, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৫৮, রোকেয়া হলে ৩১, কবি জসীম উদ্দিন হলে ৫০ জন শিক্ষার্থী হলেই ঈদ কাটাবেন। এ ছাড়া অন্যান্য হলগুলোতেও অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান করবেন, সব মিলিয়ে অন্তত ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে। সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের হলে ১০-১২জন শিক্ষার্থীর একটা লিস্ট পেয়েছি যারা এবার হলে ঈদ উৎযাপন করবে। তাদের জন্য হলের পক্ষ থেকে সকালে সেমাই সাথে ডিম খিচুড়ি থাকবে। দুপুরে থাকবে মুরগির রোস্ট, পোলাও, গরুর মাংস সাথে কোমল পানীয়। একেক হল একেক খাবারের ম্যানু ঠিক করেছে। আমি আমার শিক্ষার্থীদের জন্য এটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকবেন তাদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে জন্য আমরা একটি সভা করেছি। সভায় সকাল ও দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা থাকবে এমন সিদ্ধান্ত হয়। তবে খাবারের তালিকা নিজ নিজ হল প্রশাসন ঠিক করবে। বিগত প্রশাসনের সময় সকালে খাবার দেওয়া হতো না; কিন্তু এবার সকাল ও দুপুরে দুবেলা ভালোমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগত কেউ যাতে হলে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কবি জসীম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী খন্দকার আজিজুল হক বলেন, চাকরির পরীক্ষার জন্য এবার ঈদে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। তবে এটি আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। জীবনে নানা অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, আর এটিও তারই একটি অংশ।
ঈদে পরিবারের সান্নিধ্য ছেড়ে ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা হলেও, তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই সাময়িক আত্মত্যাগ ভবিষ্যতে বড় সাফল্য এনে দেবে।