রাবিতে বহিষ্কার ৩৩ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী

  © সংগৃহীত

শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশে গত ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫৩৫ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫ জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মী। বাকি সাতজন সাধারণ শিক্ষার্থী। তবে কোনো অপরাধে তাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ জানা যায়নি।

সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে অপরাধের ধরন ও মাত্রাভেদে ছয়জনকে স্থায়ী বহিষ্কার (ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিল), পাঁচজনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার, চারজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার, দুজনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার, একজনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, একজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৩ জনের আবাসিক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।

স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা হলেন–বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায় ও ছাত্রলীগ কর্মী মিশকাত হাসান।

দুই বছরের জন্য বহিষ্কার পাঁচজন হলেন–বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা, ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আত তাসরিফ, মুজাহিদ আল হাসান ও আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরিফুল ইসলাম।

এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত চারজন হলেন–রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা, মাদার বখ্শ হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর পাল ও ছাত্রলীগ কর্মী জারিফা আহনাফ ইলমা। অপর শিক্ষার্থী হলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আহসানুল হক মিলন।

ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী আনিকা আলম ঊষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তা। ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাসকে। একই বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিলকে ৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।

১৩ শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন–বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান মেধা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন ও নবনীতা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত জাহান পাপড়ি, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নুর ই জান্নাত কথা, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারিনা জামান মিম, সহ-সম্পাদক লিমা খাতুন, উপ-প্রচার সম্পাদক বাবলি আক্তার, দপ্তর সম্পাদক জাফরিন খান প্রিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইতাহ ইসলাম।

এ ছাড়া চারুকলা অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাবলী ইসলাম নিঝুম, সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কাজী উর্বি ইয়াসমিন রুপ এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আফরিদা বিনতে ইকবালের আবাসিক ব্যবস্থাও বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ একটি রাজনৈতিক দলের। তবে তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি; বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ জায়গায় বার্তা থাকবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাকে দল-মত নির্বিশেষে শাস্তি পেতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ