ছাত্রীর গবেষণা নিজের নামে চালিয়ে দিলেন জাবি শিক্ষক!

উপাচার্য বরাবর অভিযোগ

সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ  © লোগো

শিক্ষার্থীর গবেষণা নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এই লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই ছাত্রীর নাম জেছমিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ।

অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, আমি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাস্টার্সের (২০২১-২২)সেশনের থিসিস গ্রুপের একজন শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে আমি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। ৩য় বর্ষের ৩০৯ নং কোর্সের (Course Title:  Political Economy of Bangladesh) কোর্স শিক্ষক ইখতিয়ার উদ্দিন ভুঁইয়া আমার একটি অ্যাসাইনমেন্টের প্রশংসা করেন। এর কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন তিনি ফোন দিয়ে অ্যাসাইনমেন্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে আমি অন্য আরেকজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে সেটি প্রকাশ করার জন্য কাজ শুরু করি। তাই তাকে জানাই, আমি অন্য একজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে আমার সেটি প্রকাশের জন্য কাজ করছি। তিনি ঐ সুপারভাইজারের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টটি নিয়ে এসে তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করার জন্য বলেন। কাজেই অনিচ্ছা স্বত্বেও ঐ সুপারভাইজারের থেকে অ্যাসাইনমেন্টটি নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করতে সম্মত হই।

অভিযোগপত্রে তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পর তিনি আমার রচনাটি কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই  'Becoming  An Asian Tiger what Lesson Bangladesh Can Get From East Asian Miracle?' শিরোনামে 'International Journal of Social Science And Human Research' জার্নালে ২০২১ সালের মার্চ ইস্যুতে প্রকাশ করেন। তিনি আমার রচনাটি হুবহু প্রকাশ করার পরও আমাকে অবগত না করে তাঁর নাম প্রথম লেখক হিসেবে দিয়েছেন এবং আমার নাম দ্বিতীয় লেখক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তখন আমি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়া স্বত্বেও তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার টাইটেলে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে টাইটেল সংশোধন করার অনুরোধ স্বত্বেও তিনি তা সংশোধন করেননি। রচনাটি প্রাথমিক ড্রাফট হিসেবে থাকায় এবং পরে কোনোরূপ এডিট না করায় plagiarism থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জেসমিন বলেন, আমার টাইটেলে ভুল থাকায় প্রকাশনাটি আমার ভবিষ্যৎ শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অবৈধ ক্ষমতা চর্চা এবং সুবিচার না পাওয়ার শঙ্কায়  আমি এর আগে অভিযোগ করতে সাহস পাইনি। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই এমন ভুল টাইটেল সংবলিত প্রকাশনার কারণে বিগত তিন বছর যাবৎ আমি মানসিক অশান্তিতে ভুগছি।

জেসমিন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা পত্রটি প্রকাশের ব্যাপারেও আমাকে জানানো হয়নি। তিনি গবেষণা পত্রটি সাবমিট করেছেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামের টাইটেল ভুল করেছেন যাতে আমি গবেষণা পত্রটি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে না পারি। আমার ক্যারিয়ারকে এভাবে হুমকির সম্মুখীন করায় ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার যথাযথ বিচার দাবি করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, গবেষণা পত্রটির শিরোনাম পরিবর্তন ও প্রকাশ শিক্ষার্থীর অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী (জেছমিন) নিজের মেইল আইডি থেকে গবেষণা পত্রটি আমাকে পাঠিয়েছিল।

শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষের হওয়া সত্ত্বেও গবেষণা পত্রে তাকে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা রিসার্চ কমিটি করেছে। এটা আমি করিনি।


সর্বশেষ সংবাদ