৮ বছর পর আবারও ‘অচল’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

  © সংগৃহীত

সরকারি সর্বজনীন পেনশন স্কিম 'প্রত্যয়'-এর আওতায় আসতে অস্বীকার করে আজ সোমবার (১ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ৩৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই কর্মবিরতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থায় পড়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও চলমান আন্দোলনের বিষয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ। এতে সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে বেতন স্কেলে গ্রেডের সমস্যা নিয়ে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যদিও সে দাবি পূরণ হয়নি বলে জানা যায়।  

রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তারপর দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে একে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। 

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা মোট তিনটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন হয়েছে। 

আরও পড়ুন: শিক্ষকদের বর্জনের মধ্যেই আজ পালন হচ্ছে ১০৪তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে। 

এর আগে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কিছু কর্মসূচি পালনের পর ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না দেখে ৪ জুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত সপ্তাহে টানা তিনদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

এতদিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন শিক্ষকেরা।


সরকার এড়িয়ে যেতে চাইছে

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে নীরবতার কৌশল অবলম্বন করছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে আরো সংকট ঘনিভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষকরা। সরকারের এ উপেক্ষা করা ভালোভাবে নেয়নি শিক্ষকরা। কয়েকজন শিক্ষকনেতার সাথে কথা বলে এ মনোভাব জানা যায়। 

গতকাল রবিবার (৩০ জুন) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী কিছুটা দায়িত্ব এড়িয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের উপর চাপিয়েছেন তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশনে যেতে কেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অনীহা প্রকাশ করেছেন সেটা নিয়ে (শিক্ষক) নেতারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তুলনামূলক একটি চিত্র দেখিয়েছেন। সেখানে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ তাদের জানিয়েছি। সেগুলো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। 

“তবে সিদ্ধান্তটি (সর্বজনীন পেনশন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এবং সরকারের সার্বিক পলিসির ডিসিশনের একটি অংশ। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করা আপাতত সম্ভব নয়। কারণ সেটি (সর্বজনীন পেনশন) স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সেটি প্রযোজ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদাভাবে বিবেচনার জন্য একটি আলোচনা এসেছে সেটি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপস্থাপন করতে পারি। তাছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন তারা ইতিমধ্যে উপস্থাপনা করেছেন।” 

আরও পড়ুন: দাবি আদায়ে অনড় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা, যা জানাল পেনশন কর্তৃপক্ষ 

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। তারা যেহেতু একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই দেশ গণতান্ত্রিক দেশ সেখানে সবারই রাজনৈতিক ও বাকস্বাধীনতার অধিকার আছে। এই অচলাবস্থা যদি আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে থাকে তাহলে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেব। আমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্তে আমরা যাবো। 


জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা শুধু সরকারি সিদ্ধান্ত পালন করছে, কোনো ধরনের নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই বলে জানিয়েছে। 


কী থাকছে প্রত্যয়ে

সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখে, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে। পেনশনে যাওয়ার পর তারা এই টাকা পেয়ে থাকেন।

অর্থ বিভাগ বলেছে, বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দেয়। প্রত্যয় কর্মসূচিতে প্রতিষ্ঠান দেবে মূল বেতনের সমান অর্থাৎ ১০ শতাংশ। বিদ্যমান সিপিএফ–ব্যবস্থা থেকে তা ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। প্রত্যয় কর্মসূচিতে একজন কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা দিলে অবসরের পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে ওই কর্মচারী মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন।

প্রত্যয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য কর্মচারীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা—এ দুয়ের মধ্যে যেটা কম তা তাঁদের বেতন থেকে কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এরপর উভয় অর্থ জমা হবে পেনশন কর্তৃপক্ষের তহবিলে। অর্থ বিভাগ বলেছে, ৩০ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিলে একজন কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে চাঁদা জমা হবে ৯ লাখ টাকা আর সংশ্লিষ্ট সংস্থা জমা করবে আরও ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর মোট চাঁদা হবে ১৮ লাখ টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ।

আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন চালু হলে শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাবেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা

অর্থ বিভাগ আরও বলেছে, পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে বলে এ অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে। পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ এবং পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত। এ কর্মসূচিতে নিবন্ধিত কর্মচারীরা পেনশন পাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পরের মাস থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে মাসিক পেনশনের অর্থ পেয় যাবেন। মুঠোফোনে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে তাঁদের এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। পেনশন পেতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো দপ্তরে যাওয়ার বা কোনো ধরনের প্রমাণ দেখানোরও প্রয়োজন হবে না।


শিক্ষকদের আপত্তি যেখানে 

সরকারের পক্ষ থেকে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে মনে করেছেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তকরণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে অবনমন করার একটি অপচেষ্টা বলে মনে করেছেন তারা। শিক্ষকদের মূল্যায়ন হলো..

১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যখন অবসরে যান অবসর সময়কালীন তার মূল বেতন থাকে ৭৮ হাজার টাকা। বিদ্যমান পেনশনে তার বেতন হতে পেনশন বাবদ কোন অর্থ কর্তন করা হয় না। প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কর্তন করা হবে। সমপরিমাণ প্রতিষ্ঠান দিবে। অর্থাৎ, মাসিক পেনশন হিসাবে প্রত্যয় স্কিম হতে অবসরকালীন যা পাবেন তার অর্ধেক আপনার নিজের কিন্তু বিদ্যমান পেনশনে অবসরকালীন যা পাবেন তার পুরোটাই সরকারের। অঙ্ক কষলে বুঝা যাবে 'প্রত্যয় স্কিমে' সরকারি অংশটুকু কত। 

২) একজন ছাত্র পাশ করার পর ৩০ বছরেও যদি শিক্ষকতায় যোগদান করে তার চাকরিকাল দাঁড়ায় ৩৫ বছর। ধরে নিলাম সে মাসিক ৫ হাজার টাকা মূল বেতন হতে কর্তন করে বাকি ৩৫ বছরের জন্য। সে হিসাবে মোট কর্তনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ টাকা। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় মোট কর্তনের পরিমাণ শূন্য । 

৩) বর্তমানে একজন অধ্যাপক বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক পান ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় বা প্রত্যয় স্কিমে এককালীন আনুতোষিকের পরিমাণ শূন্য।

৪) মাসিক পেনশন ও অন্যান্য ভাতাদি যুক্ত করলে একজন অধ্যাপক মাসিক ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পান বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায়। প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত হলে ৩০ বছর পর পাবেন মাসিক ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা, যার অর্ধেক অর্থাৎ ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা নিজের বেতন হতে কর্তনের জন্য। 

৫) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক যদি ১০ শতাংশ হারে পেনশন ফান্ডে অথবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তাহলে মাসিক পেনশন দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৫ টাকা (৬৭,২৭৫+৪৫,৭৯০)। অর্থাৎ, বিদ্যমান প্রচলিত সুবিধা অর্ধেক করার প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চালু করার নীরব ষড়যন্ত্র চলছে। 

৬) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনার যদিও আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু, পেনশনারের যদি কোন কারণে মৃত্যু হয় তবে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বৎসর পূর্তি পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে নমিনি বৃদ্ধ বয়সে একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। আবার নমিনিও যদি পেনশনার হন, তাহলে উনি কি ডাবল বেনিফিট পাবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ধরে নিতে পারি এক সময় সকল বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ সর্বজনীন পেনশনে থাকবেন। 

৭) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় নিট পেনশনের উপর ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট শূন্য যা বাস্তবিক নয়। পেনশনারের ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় না নিয়ে প্যাকেজসমূহ তৈরি কোনোভাবেই বাস্তবিক নয় এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান পেনশন স্কিমের সাথে প্রত্যয় স্কিম সাংঘর্ষিক। 

৮) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বর্তমানে একজন অধ্যাপক কমপক্ষে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৫ টাকার মাসিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে ভবিষ্যতে যে সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা বর্তমান পেনশন গ্রহীতার তুলনায় অতি নগণ্য। এ যে কারণে প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । 

আরও পড়ুন: আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা

৯) বিদ্যমান পেনশনে অর্জিত ছুটি অবসরকালীন জমা থাকলে তার পরিবর্তে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও প্রত্যয় স্কিমে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। অতএব বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের সাথে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

১০) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় একজন এলপিআর সুবিধা প্রাপ্ত হন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে এ বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা নেই। এলপিআরের অর্থ বিবেচনায় নিলে বিদ্যমান পেনশন স্কিম হতে প্রাপ্ত সুবিধা প্রত্যয় স্কিমের তুলনায় আরো অনেক বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। 

১১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর, কর্মকর্তাদের ৬২ বছর এবং কর্মচারীদের ৬০ বৎসর পর্যন্ত। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির ধরা হয়েছে ৬০ বছর। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বয়সসীমা কত হবে বা প্রত্যয় স্কিমে কিভাবে সামঞ্জস্য আনা হবে এ ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা নেই। এতে প্রতীয়মান হয় বিশদ বিশ্লেষণ ছাড়া প্রত্যয় স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

১২) বিদ্যমান পেনশন স্কিমে মাসিক পেনশনের সাথে মাসিক চিকিৎসা ভাতা, বছরে দু’টি উৎসব ভাতা ও ১টি বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হয় যা অর্থমূল্যে অনেক। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় প্রত্যয় স্কিম প্রকল্পে এসব কোন কিছুই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। প্রত্যয় স্কিম অন্যান্য স্কিমের মতই বিবেচনা করা হয়েছে। যার ফলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

১৩) প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থায় পিএফ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করা হয় কিন্তু পেনশন বাবদ কোন অর্থ কর্তন করা হয় না। বর্তমান সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে ১০ শতাংশ হারে পিএফ চালু রাখতে হবে এবং ১০ শতাংশ হারে বা ৫ হাজার টাকা যা কম তা কর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অর্থাৎ, চাকরির শুরুর দিকে ২০ শতাংশ কর্তন চাকরিজীবীদের জন্য বোঝা হয়ে যায় কিনা তা ভাবনার বিষয়। এ থেকেই প্রতীয়মান প্রত্যয় স্কিম প্রচলিত পেনশন স্কিমের তুলনায় ভবিষ্যৎ কর্মজীবীদের অবসরোত্তর জীবন যাত্রায় কতটুকু ভূমিকা রাখবে। 

 

সর্বশেষ সংবাদ