অছাত্র জেনেও গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ০২:৫৬ PM , আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ০৩:১১ PM
ভুয়া সনদের উপর ভর করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব। গালিব যে ড্রপআউট ও অছাত্র তা কমিটি হওয়ার আগেই একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবগত করা হয়েছিল সেসময়। তবে বিষয়টি আমলে নেননি কেউই। যা স্পষ্টতই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ ধারার ‘গ’ উপধারাকে আঘাত করে।
তাহলে একজন এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীকে ক্ষমতায় আনতে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ কেন করলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ? বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই কল কেটে দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
জানা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এই পরিচয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি এই বিভাগের সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থী নন। স্নাতক (অনার্স) সনদে অসংগতি থাকায় গত সেপ্টেম্বরে তার ভর্তি বাতিল হয়েছে।
বিভাগটি আরো জানায়, আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জুলাই ২০২১ সেশনের ছাত্র (আইডি নং: ২৩১০০৪৬২১০) হিসেবে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তবে তার অনার্সের সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি যাচাইপূর্বক ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় গালিবের ভর্তি বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি পাস করে ২০১৪-১৫ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষ টপকাতে পারেননি তিনি। সেসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অ্যাকাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ড্রপআউট হন গালিব।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে ঢাকার উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ‘অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে বিবিএ পাসের জাল সনদপত্র (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৭৭-০০১৩-১২৪) বানিয়ে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে আবেদন করেন। তিনি এতদিন এ বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও তিনি এ বিভাগের শিক্ষার্থী না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল।
গালিবের বিবিএ পাসের সনদপত্র যে জাল তা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমে একটি চিঠি পাঠান অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরান চৌধুরী। তাঁর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, গালিব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। এমনকি ৭৭-০০১৩-১২৪ রেজিস্ট্রেশন নম্বরে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সার্টিফিকেটটি জমা দিয়ে গালিব সাংবাদিকতা বিভাগের সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছে সেটি ভুয়া।
সে সময় গালিবের অছাত্র ও ভুয়া সনদের বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে অবগত করলে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, 'সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় আমাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়েছে। তবে তারপরও যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে সেটি আমরা খতিয়ে দেখব।'
দীর্ঘ ৭ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে কমিটি ঘোষণার সাথে সাথে নতুন কমিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন কাঙ্ক্ষিত পদবঞ্চিত নেতারা।
সেসময় পদবঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মী গণমাধ্যমকে জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, বিবাহিত ও অছাত্ররা কমিটিতে আসতে পারবে না। কিন্তু সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনই বিতর্কিত। গালিবের বিষয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়েছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তার বিবাহিত ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব বিতর্কিত নিয়ে কমিটি ঘোষণা করায় আমরা বর্তমান কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
গালিবের ছাত্রত্ব নিয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটি ঘোষণা দেওয়ার আগেই আমরা বিষয়টি কখনো নিজেরা কখনো বিভিন্ন মাধ্যম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করেছিলাম। তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবেন বলে জানিয়েছিলেন। ৩৪ দিন পর কমিটি ঘোষণা করেন তারা। তবে সেই বিতর্কিতদের নিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা আমাদের কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। বর্তমান সেক্রেটারি যে অছাত্র তা কমিটি ঘোষণার পরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। আমরাও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানিয়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে তারা বা তাদের নিয়ে যারা মুভ করত তারা ভুল তথ্য দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে। এখন তো প্রমাণিত। আসলে বলার আর কিছু নেই; শুধু দেখা ছাড়া। তবে আশা করছি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিষয়টি আমলে নিয়ে একটা বিহিত করবেন।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। আমি বিজ্ঞপ্তির কপিটি প্রিন্ট করে দপ্তর সেলে জমা দিব। হয়তো এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হতে পারে। সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অছাত্রদের জন্য ছাত্রলীগে জিরো টলারেন্স জারি করা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা তার ছাত্রত্বের বিষয়ে কথা বলব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে যদি ছাত্রত্ব না থাকা বিষয়ে সত্যতা পাই তাহলে ব্যবস্থা নিব।