জাবিতে ফিরছে উন্নয়ন ফি, ভর্তিচ্ছুদের দুঃসংবাদ দিল প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তিতে গত তিন বছর উন্নয়ন ফি না নেওয়া হলেও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পুনরায় উন্নয়ন ফি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ফি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাদের।

জানা যায়, গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আগে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অন্যান্য ফি’র সঙ্গে উন্নয়ন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা নেওয়া হতো। তবে শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে সে বছর থেকে উন্নয়ন ফি নেওয়া বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ , ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফি নেওয়া হয় নি। 

তবে গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে নতুন করে উন্নয়ন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকাসহ মোট ১৪ হাজার একশত ৮৯ টাকা ফি নির্ধারণ করার কথা জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আলিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। উন্নয়ন ফি বাবদ এই ৬ হাজার টাকা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। প্রশাসনের এমন অবিবেচক সিদ্ধান্ত মোটেও শিক্ষাবান্ধব নয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রশাসন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।

আরও পড়ুন: জাবি ভর্তি আবেদন, মেধাতালিকা, চূড়ান্ত ভর্তি কবে, কীভাবে?

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হলে বিভাগগুলোর ওপর দায় চাপিয়েছেন তারা। বিভাগগুলোর চাপেই এ বছর থেকে শিক্ষার্থী কল্যাণ ফি নামে নতুন করে উন্নয়ন ফি চালু করা হয়েছে বলে বক্তব্য তাদের। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পূর্বে যে শিক্ষার্থী কল্যাণ ফি নেওয়া হতো, সেটাই এবার নাম পরিবর্তন করে উন্নয়ন ফি করা হয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থী কল্যাণ ফি নেয়া হতো না। কারণ, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তহবিল থেকে বিভাগগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ ফি বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হতো।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওপর দায় চাপিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নুহু আলম। তিনি বলেন, ইউজিসির নির্দেশক্রমে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফি বাবদ মোট টাকার ৪০% উন্নয়ন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়। এছাড়া মোট টাকার ১০% সরকারে ভ্যাট এবং বাকী ৫০% বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ব্যয় নির্বাহ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর উন্নয়ন খাত থেকে বিভাগগুলোকে প্রতি শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়ায় বিভাগগুলোতে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাই ডিনস কমিটির বৈঠকে এ বছর থেকে ভর্তিতে উন্নয়ন ফি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একই বক্তব্য দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার। কোষাধ্যক্ষ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন বাবদ যে আয় হয়, সেখান থেকে ইউজিসি নির্ধারিত ৪০% অর্থ ছাড়া বাকী টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ব্যয় চালানো যায় না। এর আগে যখন ইউজিসি টাকা নিতো না তাই আমরা উন্নয়ন ফি বাতিল করেছিলাম। কিন্তু এখন ইউজিসি ৪০% টাকা নেওয়ায় আমরা ভর্তি পরীক্ষার ব্যয় চালাতে পারছিলাম না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু ইউজিসি জানিয়েছে আমরা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় গেলে ৪০% অর্থ উন্নয়ন খাতে জমা রাখতে হবে না।

এদিকে নতুন করে উন্নয়ন ফি নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ’নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি প্লাটফর্ম। এছাড়া এ উন্নয়ন ফি-কে অবৈধ ও অন্যায্য দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আরেক অংশ (অমর্ত্য-ঋদ্ধ)। 

বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত না করে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষাকে দেখছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে ফি উত্তোলন করে তা শিক্ষা উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে না। আবার শিক্ষাদানের অবকাঠামো টিকিয়ে রাখা, গতিশীল রাখার প্রয়োজনের কথা বলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের স্বল্পতার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায় এবং উইকএন্ড কোর্স চালু রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ