ঢাবি প্রো-ভিসি নিয়োগে ৩ নাম, শিগগির প্রজ্ঞাপন

বাম থেকে অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ
বাম থেকে অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ পদে নিয়োগে পেতে এগিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। এরমধ্যে থেকে একজনকে নিয়োগ দিয়ে শিগগির শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

এ পদে নিয়োগে পেতে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। 

এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ও  সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এর আগে গত ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এর আগে তিনি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দায়িত্বে ছিলেন। পরে উপাচার্যের পাশাপাশি ৪ নভেম্বর থেকে তিনি উপ-উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করছেন। যদিও জাতীয় নির্বাচনের কারণে উপাচার্য নিয়োগের ২ মাস ১৩ দিন পার হলেও উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়নি সরকার। কিন্তু নির্বাচনের পর উপ উপাচার্য নিয়োগে গতি পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, দায়িত্ব বন্টনের ভিত্তিতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) পদ দুটি। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বেও থাকেন। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দায়িত্বে আছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে ৪ বছরের জন্য তাকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। সে হিসেবে তিনি এখনো দুই বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপাচার্য (শিক্ষা) শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে থাকেন। সেই কারণে এই পদে আসতে তোড়জোড় শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন নীল দলের সিনিয়র শিক্ষকরা। যেহেতু উপ-উপাচার্য পদে সরাসরি সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকে, এই কারণে শিক্ষকরা সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। অনেক শিক্ষক মনে করেন যে, উপ-উপাচার্য থেকে পরবর্তীতে উপাচার্য  হওয়ার দৌড়েও এগিয়ে থাকা যায়। 

উপ-উপাচার্য নিয়োগ হয় যে বিধিতে 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি যদি কাউকে উপ-উপাচার্য পদে  উপযুক্ত মনে করে তাহলে তাকে নির্দিষ্ট একটি মেয়াদের জন্য নিয়োগ দিতে পারে এবং যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিলও করতে পারে। যদিও রেওয়াজ অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদে অতীতে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। 

সিনেটের একাধিক সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপ-উপাচার্য নিয়োগ উপাচার্য নিয়োগের মতো হয় না। উপাচার্য নিয়োগের ২টি ধারার মধ্যে একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সভায় প্যানেল করতে হয়। কিন্তু উপ-উপাচার্য নিয়োগে একটিই ধারা সেটি হলো রাষ্ট্রপতি সরাসরি নিয়োগ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অথবা সিনেট বডি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নাম পাঠানোর সুযোগ নেই। নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি কয়েকজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠায়। সেখান থেকে একজনের নাম রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠানো হয়। তখন প্রজ্ঞাপন আকারে আসে। 

তবে কথিত আছে, যেহেতু উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদের নিয়ে একটি টিম হয়ে কাজ করে। সেহেতু উপ-উপাচার্য নিয়োগে উপাচার্যের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তবে সেটিই হবে, এমন রেকর্ড নেই। কেননা ইতোপূর্বে সাবেক কয়েকজন উপাচার্য  ২/৩ জনের নাম নিয়ে গেলেও সরকার তাদের নিয়োগ দেয়নি।

সাধারণত পাঁচটি শর্তে উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়। উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগের মেয়াদ ৪ বছর হয়। বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতা পাবেন, বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও আইন দ্বারা নির্ধারিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।

জানতে চাইলে নীল দলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার নাম লিস্টে থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যাকে চান তিনি এ দায়িত্বে আসবেন। যিনি দায়িত্বে আসবেন বর্তমান প্রশাসনের সাথে মিলিয়ে কাজ করবেন আশা করি।

জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, লিস্টে তো নাম আছে শুনেছি। এটা এখন প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করছে।   

জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার নাম লিস্টে আছে এটা অনেকেই বলছে। এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দিবেন। 

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি উপাচার্য হয়েছি ২ মাসের অধিক হয়েছে। এখন নতুন মন্ত্রিসভা হয়েছে। আশা করি দ্রুত উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ হবে।


সর্বশেষ সংবাদ