ঢাবির পরীক্ষা

বেআইনি কাজে শীর্ষে আইনের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আইনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, এটিই স্বাভাবিক। আইন মানার ক্ষেত্রে অগ্রভাগে দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থীদের। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। গত ৬ বছরে পরীক্ষার হলে সবচেয়ে বেশি আইনভঙ্গ করেছেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

ঢাবির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পরীক্ষার হলে সবচেয়ে বেশি অসদুপায় অবলম্বনের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন আইন এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত ৬ বছরে পরীক্ষার হলে নানা অপরাধের দায়ে এই দুই বিভাগের ৪০ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিছু দুষ্ট শিক্ষার্থী সব সময়ই থাকে। তবে আমার মনে হয় বিভাগ এবং শিক্ষকরা চাইলে এটি কমানো সম্ভব। -অধ্যাপক জিয়া রহমান, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সিজিপিএ বা নম্বর পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন বেশি নম্বর না পেলে তার জীবন ব্যর্থ। এই ভয় থেকেও অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় নকল করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।

ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অসদুপায় অবলম্বন ও অন্যান্য অপরাধের জন্য আইন বিভাগ এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি ২০ জন করে শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ১৮ জন, দর্শন বিভাগের ১৬, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২, গণিত বিভাগের ১১ জন এবং মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থী শাস্তি পেয়েছেন।

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের ঘটনায় ৫৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ২৮০ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫১ জন, স্নাতকের ৪র্থ বর্ষে ৫৩, তৃতীয় বর্ষে ৬৪, দ্বিতীয় বর্ষে ৬৭, প্রথম বর্ষে ৪৪ এবং ডক্টরেট পর্যায়ের একজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ৪৯ জন শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, ২০১৯ সালে ৪০ জন, ২০২০ সালে আটজন, ২০২১ সালে ৪৭ জন, ২০২২ সালে ৪২ জন ও ২০২৩ সালে ৯৪ জন শিক্ষার্থী শাস্তি পেয়েছেন। 

বিষয়টি জানেন না জানিয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রহমত উল্যাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ফারসি বিভাগের চেয়ারম্যান মুমিত আল রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শুধু  আমাদের বিভাগে নয়; অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নকল করে। পরীক্ষার হলে আমাদের শিক্ষকদের অবস্থান কঠোর। কেউ নকলের চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে তা ধরা হয়। সেজন্য আমাদের বিভাগে নকলকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি মনে হতে পারে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর ফারসি ভাষায় লিখতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী সঠিকভাবে উত্তর লিখতে না পারায় নকল করতে যায়। কেউ নকল করতে গেলে আমরা সতর্কতার সাথে সেটি ধরে ফেলি।

দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সিজিপিএ বা নম্বর পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন বেশি নম্বর না পেলে তার জীবন ব্যর্থ। -শিক্ষাবিদদের ভাষ্য

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকেরা পরীক্ষার সময় নকলের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেন না। ফলে নকল করলেও তারা ধরতে পারেন না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নকল যাতে না হয় সেজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করবো। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এক বা দুই বছর নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার মনে হয় আগের থেকে সিকিউরিটি সিস্টেম আরও ভালো হয়েছে যার ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলেই শিক্ষকরা তাদেরকে ধরে ফেলছেন। কিছু শিক্ষার্থী আসলে এটা করবেই তবে অনেক শিক্ষার্থী না বুঝে মোবাইল বা খাতা নিয়েই পরীক্ষা দিতে যায় যার ফলে তারাও এই কাতারে পড়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, এই অসদুপায় অবলম্বন করা কমাতে শিক্ষার্থীদেরকে প্রথম থেকেই অরিয়েন্টেশনে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে পরীক্ষা এবং ক্লাসের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে এবং পরীক্ষার আগে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে।

অসদুপায় অবলম্বন ও অন্যান্য অপরাধের জন্য আইন বিভাগ এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি ২০ জন করে শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। -গত ৬ বছরের ফলাফল

এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কিছু দুষ্ট শিক্ষার্থী সব সময়ই থাকে। তবে আমার মনে হয় বিভাগ এবং শিক্ষকরা চাইলে এটি কমানো সম্ভব। নৈতিক শিক্ষা এবং বার বার বার সতর্কীকরণের মাধ্যমে এটি কমানো যায়।

তিনি বলেন, শাস্তি দিয়ে আসলে সব কিছু সম্পুর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আর শিক্ষকদের সেটিই করতে হবে। পাশাপাশি ধাস্তির ব্যবস্থাও রাখা জরুরী।


সর্বশেষ সংবাদ