থার্টি ফার্স্ট নাইটেও উৎসবের ছোঁয়া লাগেনি ঢাবির বিসিএস পড়ুয়াদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের রিডিং রুমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের রিডিং রুমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

বিদায় নিল আরও একটি বছর। সফলতা ও ব্যর্থতার পরও বিদায়ের শেষ দিনে নতুন বছরকে আলিঙ্গন করতে উৎসবে মেতে ওঠেন অনেকে। কিন্তু সেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের উৎসবের ছোঁয়া লাগেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিসিএস পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, অন্যদের সঙ্গে উৎসবে না মেতে তাদের আনন্দ-উৎসব বলতে শুধুই পড়াশোনা।

রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে ঢাকার আকাশ যখন আতশবাজি ও ফানুসে ভরপুর, তখনও চার দেয়ালের রিডিং রুমে বইয়ের পাতায় চোখ আটকে আছে সদ্য গ্র্যাজুয়েট সম্পন্নকারী এবং জীবন সংগ্রামে নামার প্রস্তুতি নিতে যাওয়া তরুণদের।

গত ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা করা রয়েছে। এছাড়া গতকাল রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) ৪৬তম বিসিএসের আবেদন শেষ হয়েছে।

চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, আসন্ন নিয়োগগুলোকে তারা নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাই তাদের আনন্দ-উৎসব বলতে সব কিছু পড়াশোনাকে কেন্দ্র করে। অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলা, ডিজে পার্টি, উৎসবে না মেতে চাকরির প্রতিযোগিতায় নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের রিডিং রুমের একটি দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরীক্ষা, বিসিএস লিখিত ও অন্যান্য ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রে প্রথমসহ ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার হলেন ঢাবির ৩শ’রও বেশি শিক্ষার্থী

আনিসুর রহমান শ্রাবণ নামের একজন ফেসবুকে প্রথম এই ছবিটি শেয়ার করে লেখেন, এদের জীবনে থার্টি ফার্স্ট নাইট বলতে কিছু নেই। আছে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই।’ এই পোস্টে ঢাবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ অনেকে উৎসাহদায়ক মন্তব্য করছেন।

সাদিকুর রহমান সেফাত নামে একজন লিখেন, সারদা পুলিশ একাডেমির এএসপি ডরমিটরিতে বসে হঠাৎ এই ছবিটা দেখে অনেক কিছু মনে পড়ল। ২ বছর আগে ৩১ ডিসেম্বর রাতে এ রুমে হয়তো আমিও পড়ছিলাম ওই কোণার টেবিলটায়। আর আজ ট্রেনিংয়ে আছি। মিস করছি সেই কষ্টের দিনগুলো। এখন অবশ্য কষ্ট আরো বেশি। ছবিতে থাকা সবার কষ্ট স্বার্থক হোক।

মো. মনির উদ্দীন মন্তব্য করেন, এদের পেছনের গল্প হয়তো আপনি জানেন না। তবে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও ছিল। অনিক অনন্ত নামে একজনে লিখেছেন, গরীবের দেশে এরকমই হবে। জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য চাল-ডালের ম্যানেজ করা। ভালো দেশ হলে পড়ার সময় পড়তো, উৎসবের সময় উৎসব করতো।

জাহিদ হাসান সোহাগ জীবনে সফলতার জন্য পরিশ্রম প্রয়োজন উল্লেখ করে লিখেন, ‘এদের’ বলে অন্যদের থেকে এই ভাইগুলোকে আলাদা করা যাবে না। সকল ছাত্রের লাইফেই এই স্টেপ পার করতে হবে। থার্টি ফাস্ট বা নতুন বছর আসলেও লাইফ একই রকম থাকবে। উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আর সফলতা আসলে সেই দিনই তাদের উৎসবের দিন।

এদিকে, গত মঙ্গলবার ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ২১৮টি পদের বিপরীতে দুই হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩শ’রও বেশি শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


সর্বশেষ সংবাদ