ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল যেন ময়লার ভাগাড়
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৭ PM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০৩ PM
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ লাখ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখেই সমাবেশস্থল হওয়ায় ক্যাম্পাসেই অবস্থান নিয়েছেন অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাস, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন ক্যাম্পসেই পার্কিং করে রাখা হয়। এসব নেতাকর্মীরা পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাধ চলাচল, মিছিল, স্লোগান ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রেখেছিলো।
যত্রতত্র খাবার খেয়ে উচ্ছিষ্ট সবই রাখা হয়েছে যেখানে সেখানে। ফলে ক্যাম্পাসের কিছু এলাকা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিলো। তেমনই একটা ময়লার ভাগাড় যেনো ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের মাঠ। এখন পর্যন্ত মাঠটি পরিষ্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি হল প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, গতকাল শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই প্রায় অর্ধশতাধিক বাস, মাইক্রোবাস পার্ক করে রাখা হয়েছিলো হলের মাঠে। তাছাড়া কয়েক হাজার নেতাকর্মীর জন্য দিনে দুইবেলা খাবার রান্না করা হয় মাঠের পাশেই। বৃষ্টির কারণে মাঠে বসে খেতে না পারলেও নেতাকর্মীরা মাঠের আশেপাশেই বসে বা দাঁড়িয়ে খেতে শুরু করেন। বৃষ্টির কারণে মাঠের অবস্থা আরও খারাপ হয়। কিন্তু সম্মেলন শেষ হয়ে গেলেও আজ শনিবার মাঠের অবস্থা দেখে যেকেউ ভাবতে পারে মাঠটি হয়তো 'ময়লার জন্য নির্দিষ্ট স্থান'। কিন্তু না, প্রশাসনের গাফিলতির জন্য এখনো পরিষ্কার করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে মাঠটি একটি অস্থায়ী ডাস্টবিনের রূপ নিয়েছে।
হল সূত্রে জানা যায়, হল ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকারের নিজ জেলা জামালপুর এবং সাবেক সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের নিজ জেলা লক্ষীপুরসহ হল ছাত্রলীগের বর্তমান-সাবেক কয়েকজন নেতার এলাকার নেতাকর্মী ভর্তি অন্তত ৫০টি বাস হলের ভেতরে রাখা হয়। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রান্না ও খাওয়া দাওয়া হয় সেখানেই। হলের পুরো পরিবেশটা নষ্ট করে রেখে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক কর্মচারী বলেন, সমাবেশের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে রান্না হয়েছে। সবাই খাওয়া দাওয়া করে যার যেভাবে ইচ্ছে ফেলে গেছে সবকিছু। আমাদের কিছু বলারও নেই, সহজে এগুলো পরিষ্কার করাও সম্ভব না। এছাড়া ওয়াশরুমগুলোর আবস্থা আরও ভয়াবহ।
এস এম হল ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, হলের বর্তমান নেতা ও সাবেক নেতৃবৃন্দরা তাদের জেলার গাড়িগুলো এখানে এনে রেখেছেন। অন্তত ৫০টা বাস রাখা হয়েছিলো মাঠে, ফলে হাঁটার অবস্থা ছিলো না। আর হলের সার্বিক অবস্থার কথা না-ই বললাম, পুরো ডাস্টবিন হয়ে গেছে। আগামীতে যাতে এমন না হয় আমরা হল প্রভোস্টকে জানাব।
এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করি এবং হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারী সেহেতু আমার এলাকার নেতৃবৃন্দ আমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই আমার এলাকার নেতাকর্মীরা সকালের খাবার বাসে খেয়েছেন এবং রাতের খাবারও বাসে খেয়েছেন। তারা মাঠে রান্নাও করেননি ময়লাও ফেলেননি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা না জেনেই করছে বা আমার সম্মান ক্ষুন্ন করতে অভিযোগ করেছে।
হলের সাবেক সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাঠে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নঁওগা, লক্ষীপুরসহ অনেক জেলার নেতাকর্মী এসেছিলেন। আমার জেলার কেউ এখানে রান্না করেনি বা খায়নি। সকালে তারা এলাকা থেকে খেয়ে বের হয়েছে, দুপুরের খাবার এগারোটায় বাসেই খেয়েছে। রাতের খাবার যাওয়ার পথে বাসেই খেয়েছে। এটা অন্য কোন জেলা সংগঠন করতে পারে। এটা কেউ আমার নামে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য দিতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, এতবড় একটা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা এসেছে আমাদের ক্যাম্পাসে। তারা খেয়েছে মাঠে, হয়তো ময়লা ফেলেছে কিন্তু তারা তো আর পরিষ্কার করবে না। আজকে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় মাঠে ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে না। তাই আজ পরিষ্কার না করা হলেও কাল পরিষ্কার শুরু করা হবে। অনেক মানুষ এসেছিলো, তাই ময়লাও বেশি এজন্য হয়তো সময় বেশি লাগতে পারে।
হলের বাস রাখা ও রান্না করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিলো কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা এসেছে এখানে অনুমতি নেওয়ার কিছু নেই। অন্য হলেও তো নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলো, সেখানেও তারা থেকেছে, খেয়েছে সেখানেও তো অনুমতি নিতে হয়নি।