ছাত্রসমাবেশের জের
ঢাবি হলের ক্যান্টিনে খাবার নেই, রুটি-কলায় দুপুরের খাবার
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫২ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৩ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলের ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা খাবার না পেয়ে ক্যান্টিন থেকে ফিরছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া কিছু হলের ক্যান্টিনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য রান্নাই হয়নি। ফলে দুপুরের লাঞ্চ রুটি-কলা কিংবা শুকনো খাবার দিয়ে সারতে হয়েছে এসব শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, ছাত্রসমাবেশ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হলে খাবার ফ্রি করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে সেটা সুনির্দিষ্ট নেতাকর্মীদের জন্য। তাছাড়া ফ্রি খাবার থাকায় বহিরাগতদেরও চাপ অনেক বেশি। যারা প্রোগ্রাম করবে না বা হলে নন পলিটিক্যালি থাকে তাদেরকে টাকা দিয়ে কিনেই খেতে হচ্ছে খাবার। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা খাবার পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেলা ১১-১২টা পার না হতেই খাবার শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ হলেই। অনেকে খাবার খেতে না পেরে বিভিন্ন হলে ঘুরাঘুরি করে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেকে খাবার না পেয়ে দোকান থেকে রুটি-কলা খেয়ে রুমে ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী জানান, সাধারণত ২টা পর্যন্ত খাবার পাওয়া গেলেও আজকে শেষ হয়েছে ১২টায়। এসময় এক বয়কে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানায় ভাত আছে তবে তরকারি শেষ হয়ে গেছে। হলের মেইন ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খাবার নেওয়ার স্থানে দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন এবং যারা প্রোগ্রাম করবে না তাদের জন্য খাবার নেই বলতে শোনা গেছে।
বিজয় একাত্তর হলের ক্যান্টিনের দরজায় ‘আজ নাস্তা ও দুপুরের খাবার বন্ধ রয়েছে’ বলে লেখা রয়েছে। তবে কে বা কারা লিখেছে সেটা জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রথমে আমার হলে খাবার খেতে গিয়ে খাবার পাইনি৷ পরে সূর্যসেন হলের ক্যন্টিনে খাবার খেতে গেলে সেখানেও খাবার পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে দোকান থেকে কেক খেয়ে হলে চলে আসি। বহিরাগতদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের ক্যান্টিনে রান্না খাবার সংকট ছিলো প্রকট। ১২টা পার না হতেই কয়েক দফা খাবার শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকেই দোকান থেকে রুটি কল খেয়ে গেছে। আমিও গিয়ে খাবার পাইনি তাই দই চিড়া খেয়ে হলে ফেরত এসেছি।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের দুইটি ক্যান্টিনের কোনটিতেই খাবার নেই। এলাকা ভিত্তিক ছাত্রলীগের নেতারা খাবারের অর্ডার নেওয়ায় হলের শিক্ষার্থীদের জন্য রান্না করা হয়নি। তবে দোকানে ১২টা খাবার পাওয়া গেলেও পরে আর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ওই প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি ব্যাপারটা জানতাম না, কিছুক্ষণ আগেই সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার দুঃখ এখানেই যে কোন শিক্ষার্থী আমাকে হলের পরিস্থিতি জানালো না। আমি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করছি কিন্তু তারা যদি আমাকে সমস্যার কথা না জানায় তাহলে আমাকে গিয়ে সব বিষয় সমাধান করা সম্ভব না। তবে আমি আজকের ক্যান্টিনের খাবার না পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো। মালিকদের সাথে আমার চুক্তি শিক্ষার্থীদের খাবার নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর পরে তারা হাজার মানুষকে খাওয়ালে আমার সমস্যা নেই। আমি মাঝেমধ্যেই তাদের জরিমানা করে থাকি এবার আমি তাদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিবো।
জহুরুল হক হল প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম বলেন, আজকে ছাত্রলীগের সমাবেশ থাকায় বাইরের শিক্ষার্থীদের একটা চাপ রয়েছে সেজন্য খাবারের সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আমি মনে করি হলের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট আন্তরিক এবং সবার স্বার্থে এই সাময়িক সমস্যা মানিয়ে নিয়েছেন। তবে অন্য কোন কারণে খাবারের ঘাটতি হয়েছে কি-না আমি আরও ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, আমার হলের কোন শিক্ষার্থী আমাকে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করেনি, তাই আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।