তারুণ্যের ঈদ উদযাপন

  © টিডিসি ছবি

ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব। আত্মত্যাগ, সেবা, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানো এই পবিত্র ঈদ সবার মাঝেই আনন্দের জোয়ার বয়ে নিয়ে আসে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দ্যেশ্যে পশু কোরবানি করেন। কোরবানি ঈদ মুসলিমদের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ত্যাগের মহিমা অনুধাবন করতে পারে। নিজ পরিবারের পাশাপাশি সমাজেও ছড়িয়ে দিতে পারে। তারুণ্যের সেই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাবি প্রতিনিধি রিফাত হক- 

‘প্রতিবেশী-স্বজনদের কাছে মাংস পৌঁছে দেয়া যেন ছেলেদের একটা আলাদা বাহাদুরি ব্যাপার’
আমাদের মা-বাবাদের অসুখের কারণ আমরা। এটা স্পষ্ট বুঝতে পারি যখন সবাই ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে একত্রিত হই আর খেয়াল করি যে, বাবা মায়েরা পরিবারের সবাই একত্রিত হওয়ার পর খুব ভালো হাসি খুশি আছে! এই যে অদৃশ্য অথচ সুন্দর একটা ব্যাপার ঘটে যায় এই ব্যাপারটাই ঈদকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে রেখেছে এখনো। 

কুরবানীর ঈদ ছেলেদের জন্য আরেকটু বেশি স্পেশাল আমি মনে করি। পশুর হাটে গিয়ে সাধ্যের মধ্যে কুরবানির জন্য পশু কেনা। ঈদের দিনে মাংস বানানো, প্রতিবেশি আত্বীয়দের কাছে মাংস পৌঁছে দেওয়া যেন ছেলেদের একটা আলাদা বাহাদুরি ব্যাপার। 

এই ইদে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেছি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বিবেচনায় রেখে আমাদের এলাকার জন্য কাজ করে আমাদের গড়ে তোলা সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা কম পক্ষে ১ হাজার গাছ লাগাবো। পাশাপাশি বাংলাদেশের মাটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, রেইনট্রি গাছ এই বিষয়ে সচেতন করাটাও এই ঈদে জরুরী একটা কাজ আমার জন্য।]

[খালেদ হাসান শান্ত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

‘ভেতরের পশু সত্তাকে কোরবানি করাই যেন আমাদের লক্ষ্য হয় এদিকে নজর রাখা উচিত’
সময়ের চলাচলে আমরা বড় হয়ে উঠি। বছর ঘুরে আসে ঈদ। আমরা প্রতি বছর ঈদকে নতুন ভাবে চিনতে শিখি। ঈদুল আযহাকে আমরা কোরবানির ঈদ নামেই বেশি বলে থাকি। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হতে শেখায় এই ঈদ। জটিল সময়ের চাকায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ঈদকে বাড়ি যাবার বাহানা মনে হয়। ক্লাস, পরীক্ষা, চাকরির প্রস্তুতির মধ্যে বাড়ি ফেরার এক দারুণ বাহানা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈদ।

পরিবারের সবার এক হাওয়া, শহরের ছেলে গ্রামে ফিরে আসা আর পুরোনো বন্ধুদের সাথে সাধের আড্ডার মধ্য দিয়েই ঈদ চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত বলয় ভেঙে ধর্মীয় অনুশাসন আর ভেতরের শান্তির প্রবাহকে সুন্দর করে তোলে ঈদ। কোরবানির ঈদের মহিমা চমৎকার। ভেতরের পশু সত্তাকে কোরবানি করাই যেন আমাদের লক্ষ্য হয় এদিকে নজর রাখা উচিত। বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের খাবার, বাবার সাথে কোরবানির পশু দেখতে যাওয়া, ঈদের দিন আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গোশত বিতরণ আর পরিবারের সবার সাথে বসে গল্প করার পরিতৃপ্তিই আমার ঈদ। পরিশেষে বলতে চাই ঈদুল আজহার নিয়ামত সবার জীবনকে সুন্দর করে তুলুক। সকলকে ঈদুল আজহার পবিত্র শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

[শাহিদ রহমান রাহাত, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

‘এই দিন- মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাবার দিন’
মুসলমানদের জীবনে অন্যতম সেরা একটি দিন ঈদের দিন৷ এই দিন- মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাবার দিন৷ একটা কথা আছে, ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। প্রতিটা ঈদ-ই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হতে অনুপ্রেরণা দেয়৷ বিশেষত কুরবানীর ঈদ মূলত আল্লাহ'র সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগকে নির্দেশ করে৷ পরিবারের ও সমাজের সবার সাথে মিলেমিশে ঈদ পালন করা অবশ্যই আনন্দদায়ক। তবে এখনকার ঈদ আগের মত আনন্দদায়ক হচ্ছে না। বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকে, তবুও যেন আনন্দ থাকে না; সবকিছু যেন মেকি মনে হয়। বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে আমরা সরাসরি ইন্টারেকশন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন- ঈদ মানেই ফেসবুকে ছবি আপ্লোড দেওয়া ও ঈদ মুবারক উইশ করা৷ আমাদের ঈদ যেন ফেসবুকে সীমাবদ্ধ না হয়ে যায়- সেই কামনাই রইল। আসুন মিলেমিশে একসাথে, ইদ কাটাই আনন্দে! আসুন ইদে আমরা আমাদের ইগোকে কুরবানি দিয়ে একে-অন্যের সাথে ঈদ আনন্দ বণ্টন করে নেই। আনন্দ যত বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ততই ভালো। সবাইকে ঈদ মুবারক।

[শুভ আহমেদ, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

‘একদিকে লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে ত্যাগের চিরন্তন শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও মনে করিয়ে দেয়’
ঈদুল আজহা আমার কাছে শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সম্পূর্ণ গ্রামীণ আবহে ফিরে গিয়ে পুনঃমিলনে মেতে ওঠার সুযোগও বটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-অ্যাসাইনমেন্টসহ বিভিন্ন কারণে গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয় না বললেই চলে। ঈদুল আজহার সুবাদে আমরা সেই সুযোগ পাই। তাই ঈদুল আজহা আমাদের কাছে যেমন ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সামাজিক ও পারিবারিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। 

ঈদুল আজহা একদিকে আমাদের লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে ত্যাগের চিরন্তন শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও মনে করিয়ে দেয়। পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনের পশুত্ব দূর করি, একইসাথে মনের কুটিলতা দূর করে পরিচ্ছন্ন মানসিকতার শপথ নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে কুরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করে আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখারও শপথ নিই। আমাদের সবার জীবনে ঈদ আসুক অপার আনন্দের মাধ্যম হিসেবে। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে, সবার মনে। সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

[আরিফ ইশতিয়াক রাহুল, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]


সর্বশেষ সংবাদ