ঈদের ছুটিতে নীরব রাবি ক্যাম্পাস, সরব পাখিরা
- মারুফ হোসেন রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ AM , আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ AM
গ্রীষ্মকালীন ও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৩২ দিনের লম্বা ছুটিতে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বন্ধে ক্যাম্পাস এখন নিস্তব্ধ, নীরব। নেই গাড়ি আর হর্নের বিরক্তিকর আওয়াজ, নেই মানুষের আনাগোনা। চলছে শুধুই প্রকৃতি আর বিভিন্ন ধরনের পাখিদের রাজত্ব। পাখিদের কলতানে মুখরিত শিক্ষার্থী পদচারণাহীন ফাঁকা ক্যাম্পাস। মনের আনন্দে বিভিন্ন জায়গায় নানান সুর তুলছে, উড়ে ও ঘুরে বেড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের পাখি। গাছে-গাছে, ডোবা-নালা, মাঠে-প্রান্তরে খুঁনসুটিতে মেতেছে তারা।
৭৫৩ একরের সর্বত্রই বিচরণ করছে তারা। ক্যাম্পাসকে তারা নিজেদের রাজ্য বানিয়ে নিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। এ যেন তাদের আনন্দের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাখিদের মধ্যে শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বামুন শালিক, গোবরে শালিক, কাঠ ঠোকরা, বুলবুলি, বাবুই, হুদহুদ, মাছরাঙা, শামুকখোল, টিয়া, নীলগলা বসন্ত বাউরি, দেশি চাঁদি ঠোঁট মুনিয়া, পেঁচা, মেটে-মাথা কুড়া ঈগল, কোকিল, সবুজ বাঁশপাতি, হুতুম পেঁচা, পাঁতি কাক, নিশি বক, বাজকা, কানা বক, কাঠবিড়ালি, গো-বক, ফিঙে, কোকিল, টুনটুনি ও চড়ুই পাখিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির রাজত্ব।
এছাড়া হাস জাতীয় পাখিদের মধ্যে মুরহেন, খঞ্জনা, ডাহুক, কালিম, জলপিপি, ছোট সরালি, বড় সরালি, জল ময়ূর, বালি হাঁস, পানকৌড়িসহ আরো অনেক ধরনের পাখি।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, বিভিন্ন আমতলা, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পরিবহন মার্কেট, ইবলিশ মাঠ, পশ্চিমপাড়া, টিএসসিসির মাঠ, শহিদ হবিবুর রহমান মাঠ, বিজ্ঞান ভবনের মধ্যবর্তী লেক, তুতবাগান, কৃষি অনুষদ, শহিদ মিনার ও বদ্ধভূমির আশেপাশের গাছগাছালিতে হরেক রকমের পাখিদের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। নিরব সজীবতার পরিবেশে খুঁনসুটিতে মেতেছে দেশি-বিদেশি এসব পাখি। পুরো ক্যাম্পাস এখন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবসময়ই পাখিদের জন্য এক নিরাপদ আবাসস্থল। ক্যাম্পাস চলাকালীন সময়েও অতিথি পাখিসহ হরেক রকমের পাখিদের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। তবে সেটি ছিল নির্দিষ্ট কিছু স্থানে। বন্ধের পর তা ছড়িয়ে গেছে ক্যাম্পাসের সর্বত্রই। বাইরে থেকে অনেক ধরনের পাখি বাসা বাঁধছে এই ক্যাম্পাসের গাছগাছালিতে। ফলে মাত্রাধিক হারে বেড়েছে পাখিদের আনাগোনা। জন-মানবহীন ক্যাম্পাস এখন সারাক্ষণই পাখির কলতানে মুখর হয়ে থাকে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কয়েকটি স্থানে বৃক্ষনিধন ও পুকুর ভরাট দিয়ে আবাসিক হল, ও অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করায় বিরূপ প্রভাব পড়ে পশু-পাখিদের উপর। সাথে যানবাহনের বিরক্তিকর শব্দ এবং কোলাহলপূর্ণ ক্যাম্পাসের কারণে বসবাসের প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয় পশুপাখিরদের জন্য। তবে ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ার পর সেই অবস্থা কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিনই বাড়ছে পাখিদের উপস্থিতি।
পাখিদের নিয়ে কাজ করে এমন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস ছুটি হলে খু্ব স্বাভাবিকভাবেই পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পশুপাখি বিচরণের জন্য আমাদের ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ কমে গেছে, যতটুকু আছে সেখানেও মানুষের আনাগোনা। তাই ছুটিতে ক্যাম্পাসে মানুষের আনাগোনা কমেছে, পশু-পাখির বিচরণ বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই পৃথিবী একা মানুষের জন্য না, পশুপাখি জীবজন্তু সবার। মানুষ বরং তাদের জায়গা দখল করেছে। এখন মানুষ কমে গেছে, তাই তারা তাদের জায়গায় ফিরে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসান বলেন, পাখিরা সাধারণত নির্জন-নিরিবিল পরিবেশে বেশি অবস্থান করে। তবে আমাদের ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি স্থানে পরিবেশ বন্ধু বৃক্ষনিধন ও পুকুর ভরাট করে আবাসিক হল নির্মাণ করার ফলে পাখিদের আবাস্থল কিছুটা কমে গেছে। তবে ক্যাম্পাসে এখন মানুষের পদচারণা কমে যাওয়ায় পাখিদের আবার ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে।