আইন বিভাগ

একাডেমিক পরীক্ষায় -৪, -৫ মার্ক দিলেন ঢাবি অধ্যাপক

কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও মাইনাস মার্কিং পাওয়া তালিকা (কয়েকজনের)
কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও মাইনাস মার্কিং পাওয়া তালিকা (কয়েকজনের)  © টিডিসি ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একটি কোর্সের দুইটি টার্ম পরীক্ষা ও টিউটোরিয়ালের নাম্বার নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ক্রিমিনোলজি কোর্সের দুইটি টার্ম পরীক্ষা ও টিউটোরিয়ালে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নাম্বারে মাইনাস মার্কিং দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া পরীক্ষা না দিয়েও নাম্বার পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) অনলাইনে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত এই নাম্বারপত্রে আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন শিক্ষার্থীদের এমন মাইনাস মার্কিং করে আলোচনায় আসেন। তবে ঘটনাটি দ্রুত জানাজানি হলে তাৎক্ষণিকভাবে এই মার্কশিটটি অনলাইন থেকে তুলে নেওয়া হয়। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মার্কশিটে এই অনিয়মের বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষার্থীদের। তবে কোর্স সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষক জানান, এটি অনানুষ্ঠানিক মার্কশিট। আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কশিটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের ভিত্তিতেই প্রকাশ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কশিট বলে কিছু নেই। তাছাড়া একজন শিক্ষক কখনো চাইলে মাইনাস মার্কিং করতে পারবেন না। 

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মার্কশিটের কপিটি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রকাশিত মার্কশিটে আরও দেখা যায়, যারা ওই বর্ষে পুনরায় ভর্তি হয়েছেন তাদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বার প্রকাশ করা হয়নি। পুনরায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মোট ১৬৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের সদ্য প্রকাশিত টিউটোরিয়াল ও দুইটি টার্ম পরীক্ষার এই ফলাফলে দেখা যায়, মোট ৩০ নাম্বারের (২টি টার্ম-২০ এবং টিউটোরিয়াল-১০) তিনটি পরীক্ষায় অধ্যাপক কার্জন কয়েকজনকে দিয়েছেন শূন্য, আবার তাদের মধ্যে কেউ পেয়েছেন এক নাম্বারও। আবার মোট ৩০ নাম্বারের মধ্যে জুবায়ের রহমান নামের এক শিক্ষার্থী পেয়েছেন মাইনাস এক (-১) নাম্বার। এছাড়াও এ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে অনেক শিক্ষার্থী টার্ম পরীক্ষায় ১০ নাম্বারে মাইনাস দুই থেকে মাইনাস ৫  পেয়েছেন। ফলে তারা মোট নাম্বার (৩০ নাম্বারের মধ্যে) ৫ পেলেও তাদের মোট প্রাপ্ত ফলাফল শূন্য দেখানো হয়েছে।

আবার যারা টিউটোরিয়াল ও একটি টার্মে মোট ১০ বা ১৫ নাম্বার পেয়েছেন তাদের আরেকটি টার্মের নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে চূড়ান্ত নাম্বার (৩০ নাম্বারের মধ্যে) কমে ৮ থেকে ১০ নাম্বারে এসে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, জুবায়ের রহমান নামে একজন শিক্ষার্থী সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা না দিয়েও পেয়েছেন ৪ নাম্বার। কিন্তু প্রথম টার্মে মাইনাস পাঁচ (-৫) নাম্বার পাওয়ায় মোট নাম্বার আসে মাইনাস এক (-১) নাম্বার। ফলে ওই কোর্স শিক্ষক খাতা মূল্যায়ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিভাগের ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

এভাবে নাম্বার প্রদানের ফলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি-না তা নিয়েও সংশয় জানিয়েছেন তারা। এমন ফলাফলে তাদের মাঝে তৈরি হয়েছে চরম মানসিক চাপ ও হতাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় শীর্ষ ফলাফলধারীরা এভাবে মাইনাস মার্কিংয়ের শিকার হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হবেন এটি মেনে নিতে পারছেন না বিভাগটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। 

অন্যদিকে, এই সেশনের চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ১০ মে থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে অনানুষ্ঠানিক নাম্বার প্রকাশ ও তা বাতিলের ফলে এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের ফল বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কিত। পাশাপাশি এ বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও রাজি হচ্ছেন না।

অধ্যাপক কার্জন এর আগেও দুইজন শিক্ষার্থীর ক্রিমিনোলজি কোর্সে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন তাদের টার্ম- টিউটোরিয়ালের ৩০ নাম্বারে তাদের নাম্বার শূন্য দেওয়া হয়েছে। এরপর নানা ঝামেলা পার করে শূন্যর বদলে অল্প কিছু মার্কস পেয়ে পাশ করেন কোন রকমে। সেবার তিনি কারোই ফলাফলের নাম্বার প্রকাশ করেননি বলে জানা গেছে।

সেসময়কার ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী জানান, আমার ধরণা তিনি আমাকে টার্ম-টিউটোরিয়ালে ৩০-এর মধ্যে শূন্য (০) দিয়েছেন বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই। অন্য সব কোর্সে আমার জিপিএ-৩(+) থাকলেও এই এক কোর্সে আমার জিপিএ-২.২৫। অথচ যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম আমার কমপক্ষে জিপিএ-৩ থাকার কথা।

বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের এমন বির্তকিত কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি সময়মতো অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিতে গড়িমসি, জমা না নিয়ে ইচ্ছেমতো নাম্বারিং, প্রেজেন্টেশন নিয়ে হয়রানিসহ নানান বির্তকিত কর্মকাণ্ড করেছেন।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) বলেন, মার্কশিটের কপি অফিস থেকে এখনো আমি হাতে পাইনি। অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে কি-নাও আমার জানা নেই। তাই আমি এখন এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, একজন শিক্ষক কখনো চাইলে মাইনাস মার্কিং করতে পারবেন না। পরীক্ষায় নাম্বার কম-বেশি দেয়া একজন শিক্ষকের এখতিয়ারে রয়েছে। কেউ চাইলে শূন্য দিতে পারবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনবিধিতে বলা নেই যে, একজন শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীকে মাইনাস দিতে পারবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত কাজ। যদিও বিষয়টি আমার নজরে আসেনি; তবুও আমি বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর কথা বলে খতিয়ে দেখার জন্য বলবো।

অনলাইনে প্রকাশিত এই মার্কশিটের বিষয়ে অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, এটা অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ছিল, তাই বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু টার্ম ও টিউটোরিয়ালের নাম্বার দেয়া না দেয়া শিক্ষকের এখতিয়ার, তাই শিক্ষার্থীদের না পারায় এমন মার্কিং করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক মার্কশিট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের ভিত্তিতেই প্রকাশিত হবে।

পরীক্ষা না দিয়েও নাম্বার পাওয়া শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটা ছোট ভুল ছিল। তাছাড়া এটি যেহেতু আনুষ্ঠানিক না, সেহেতু এটি নিয়ে মন্তব্য করাটা অযৌক্তিক।


সর্বশেষ সংবাদ