ঢাবি ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা, সেদিন ক্লাসে কী ঘটেছিল?

অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান ও আত্মহত্যার চেষ্টা করা ছাত্র এসএম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব
অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান ও আত্মহত্যার চেষ্টা করা ছাত্র এসএম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পর বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্লাসে শিক্ষক ‘অপমান’ করেছেন দাবি করে 'ঘুমের ট্যাবলেট' খেয়ে আত্মহুত্যার চেষ্টা চালান তিনি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ‘রক্তের বদলা রক্ত দিয়ে আদায়’ লিখে পোস্ট দেন ফেসবুকে। এটিকে জীবনের জন্য হুমকি বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর ) বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. তানজীমউদ্দীন খান।

বৃহস্পতিবার (২মার্চ ) রাত ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা এহসান উল্লাহ ধ্রুব। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় হলের পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে। তার অবস্থা এখন ভালো বলে কর্তব্যরত নার্স ও পরিবার জানিয়েছে। এহসান উল্লাহ ধ্রুব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক।

বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগের ট্যুরের পরদিন ধ্রুব অধ্যাপক তানজীমউদ্দিনের কাছে তারই সহপাঠীদের নিয়ে অভিযোগ দেন। পরে তিনি ক্লাসে সবার সামনে সহপাঠীদের নামে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দেয়ায় বকাবকি করেন। শিক্ষকের ভাষ্যমতে, এহসান এক মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় মেয়েসহ কয়েকজনের নামে তার কাছে অভিযোগ দেন।

এতে তিনি বকাবকি করেন এবং বন্ধুদের নামে অভিযোগ দেয়াকে খারাপ হিসেবে দেখেন। তিনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ক্লাস শেষে এহসান স্যরি বলতে গেলেও শিক্ষক তাকে ‘অপমান’ করেন বলে অভিযোগ করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে অধ্যাপক তানজীমউদ্দীনকে দোষী বলে আত্মহুতির হুমকি দেন ধ্রুব। এর চার ঘন্টা পর রাত ১টার দিকে ২৪টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা যায়।

ধ্রুব’র সহপাঠী ও বন্ধু সাদমান বিন আহসান বলেন, ‘প্রথমেই আমি ধ্রুবর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। তবে এ ঘটনার মধ্যে রাজনীতি কোথা থেকে এসেছে সেটা আমরা ক্লাসে উপস্থিত ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী কেউই বুঝতে পারছি না। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকের মধ্যে তানজীম স্যার একজন। আজকের ক্লাসে, আগে-পরে উনি ছাত্রলীগ বা রাজনীতি নিয়ে একটা কথাও বলেননি। আজকের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক। একজন ছাত্রীর সম্পর্কে এরকম পাবলিক ডিফেমিং ও মিথ্যা কমেন্ট শোনার পরে একজন শিক্ষকের স্বাভাবিক রিঅ্যাকশন। কিন্তু কেন ধ্রুব এভাবে ফেসবুকে স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলো আমরা জানি না।’

অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন বলেন, ‘বিভাগের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্যুরে গিয়েছিলাম। এ নিয়ে ধ্রুব তাঁর রুমে এসে এক সহপাঠীকে নিয়ে কটু কথা বলে। এ সময় ক্লাসের সবার সামনে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায় এহসান যাকে নিয়ে মিথ্যা বলছে, তাকে পছন্দ করতো, প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছে। রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল। তাকে বুঝিয়েছি, বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। রাতে ফেসবুকে আত্মহত্যার কথা লিখে ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহুতির চেষ্টা করেছে।’

অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন শুক্রবার সকালে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘তার (এহসান) ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং আত্নহনন চেষ্টা নিয়ে যেরকম নোংরামি শুরু হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত এবং হতাশ! এমনকি কোনও এক রাজনৈতিক কর্মী ‘প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রক্তের মূল্য আদায়’র মত ভয়ানক স্ট্যাটাস দিয়েছে, যা আমার জীবনের প্রতি হুমকি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এভাবে প্রকাশ্যে কোনও শিক্ষককে জীবননাশের হুমকি দিতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিলো! আমরা আসলে শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিচ্ছি?’

এ ব্যাপারে এহসান উল্লাহ ধ্রুব শারীরিক দূর্বলতার জন্য মোবাইল ফোনে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে সকাল ৯টায় ফেসবুকের কমেন্টে তিনি বলেন, ‘আমি স্যারকে স্বপ্রোণদিত হয়ে কিছু বলতে যাইনি। এটি আজকে ক্লাসের আগের ঘটনাও না। স্যারের কাছে আমি গিয়েছিলাম তিনদিন আগে। আমার নামে স্যারে কাছে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, সে পরিপ্রেক্ষিতে আমি যে দোষী না সেটা বলতে। স্যার আমাকে ক্লাসে ছোট না করলেও পারতেন।’

আরো পড়ুন: ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ ঢাবি ছাত্রের, মধ্যরাতে শিক্ষকের বিচার দাবি ছাত্রলীগের

ধ্রুব আরও লিখেছেন, 'তুমি কত বড় নেতা হয়ে গিয়েছ' এই কথা তিনি আমাকে ক্লাসে বলেছেন। আমার একটা কথাও তিনি শোনেননি। আমি স্যারের ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম স্যারকে স্যরি বলতে। আমি কান্না করছিলাম সে সময়। তবুও স্যার আমার সাথে বাজে আচরণ করে যাচ্ছিলেন। এখন আমি স্যারকে বলি, আমি যদি আজকে সুইসাইড করি স্যার এর দায়ভার আপনার।’ 

ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে সেখানে অবস্থান নেন তারা। এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খানের বিচার দাবি করেন নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ক্লাসের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে আত্মহুতির হুমকি দিয়ে রাত ২টার দিকে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এক ছাত্র। আমরা ঘটনার খবর জানার পরপরই পদক্ষেপ নিয়েছি। পরবর্তীতে তাকে শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করে রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। আমরা আশ্বাস দিলে তারা ৩টার দিকে স্থান ত্যাগ করেছেন। রাতে বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, একজন শিক্ষকের কখনো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে সবার সামনে অপমান করার অধিকার নেই। যে ছাত্র কি-না ট্যুরে যায়নি, সে কীভাবে ট্যুরের বিষয়ে বন্ধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে? তিনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি অভিভাবকতাসূলভ আচরণ থেকে সরে গিয়ে ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ ছেলেদের মাঝে ছড়ানোর চেষ্টা করতেন।

শিক্ষককে পোস্টে হুমকি দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি হুমকি না, প্রতিবাদের ভাষা। তিনি শিক্ষক, তিনি এ সহজ বিষয়টি না বুঝলে আবার স্কুলে ভর্তি হওয়া দরকার। গতকাল আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এহসানকে হাসপাতালে না নিলে, সে মারা গেলে দায় সম্পূর্ণ শিক্ষকের ছিল। তখন তিনি কি জবাব দিতেন! সেক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাকে কখনোই ছাড় দিতেন না।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence