মাদকবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ‘দ্বিতীয় চাপায়’ মৃত্যু হয় রিকশাচালক কুদ্দুসের

মাদকবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ‘দ্বিতীয় চাপায়’ মৃত্যু হয় রিকশাচালক কুদ্দুসের
মাদকবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ‘দ্বিতীয় চাপায়’ মৃত্যু হয় রিকশাচালক কুদ্দুসের  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাদকবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দ্বিতীয় চাপায় হত্যা করা হয়েছিল রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুসকে (৩০)।  প্রথম ধাক্কায় রিকশা থেকে পড়ে যায় চালক ও এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ চার যাত্রী। পরের চাপায় রিকশাচালকের মাথা ও বুকের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্স।

মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আহত সেই অন্তঃস্বত্তা নারীর ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

ফরহাদ হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাকলি আক্তার সাভারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপ শেষ করে অটোরিকশা দিয়ে দোসাইদে তাঁদের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনের ইউটার্নে মোড় নিয়ে সিএন্ডবি সড়কে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সটি ওই রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় রিকশায় থাকা সবাই ছিটকে পড়ে যান।

পরে অ্যাম্বুলেন্সটি পালিয়ে যাবার সময় দ্বিতীয়বার রিকশাচালকের উপরে দিয়ে উঠিয়ে দেয়। এতে সেখানেই রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস মারা যান।

তিনি বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি ওই রিকশায় মোট চারজন যাত্রী ছিলেন। তাঁরা হলেন কাকলি আক্তার (২৬), তাঁর স্বামী সবুজ আহমেদ (৩০), তাঁদের ২৬ মাসের শিশুসন্তান শোয়াইব এবং কাকলির ভাতিজি ১৪ বছরের জান্নাত। তাঁদের মধ্যে কাকলি চার মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। তাঁরা সবাই সাভারের কলমার দোসাইদ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে পাঁচ সদস্যের কমিটি

ফরহাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আহত চারজনকে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। জান্নাত ও শোয়াইবকে দুদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ২৮ জানুয়ারি কাকলি আক্তার ও সবুজ আহমেদকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, সেখান থেকে পরদিন (২৯ জানুয়ারি) কাকলি আক্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সবুজ আহমেদকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেলে কাকলির গর্ভ থেকে মৃত সন্তান বের করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও জানান ফরহাদ হোসেন। 

এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শেষ করে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সাভার মডেল থানায় যোগাযোগ করি। আমরা মামলার করার কথা বললে পুলিশ জানায়, তাঁরা বাদী হয়ে ইতিমধ্যে একটি মামলা করেছে।

‘‘পরে মামলার বাদী সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রাসেল মাহমুদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি। তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক বাবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।’’ এরপর ফরহাদ একটি মামলা করার কথা জানালে বাবুল তাঁকে মামলা না করার পরামর্শ দেন।

ফরহাদ আরও বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও আমরা কোন তথ্য পাইনি। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করার কথা জানালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। আমরা পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি জানতে পারি। মামলা করতে চাইলে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে পাশাপাশি তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও গাফিলতি দেখেছি আমরা।’ 

এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনের দাবি জানান তিনি।

জানতে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা আজকে আহতদের সম্পর্কে জেনেছি। তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। এর আগে তাঁরা থানায় যোগাযোগ করেছে কিনা আমার জানা নেই।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এমন খবর জানিয়ে একজন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি ব্যস্ত ছিলাম বলে পরে যোগাযোগ করতে পারিনি।আজ (মঙ্গলবার) সকালে নিজেই ফোন করে তাঁদের তথ্য নিয়েছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence