শোকজের জবাব দিলেন ভিসিকে নিয়ে মন্তব্য করা চবি অধ্যাপক

চবি ভিসি ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন
চবি ভিসি ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে শোকজ খেয়েছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। শোকজের ১০ দিন পর রোববার (২০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ১৭ পৃষ্ঠার লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

এর আগে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘‘উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অনিয়ম হচ্ছে।’’

অধ্যাপক হেলালের এমন মন্তব্যে মনক্ষুন্ন হয় চবি প্রশাসন। পরে তাকে তার বক্তব্যের ব্যাখ্য ও প্রমাণ তিন কার্যদিবসের মধ্যে দিতে গত ৪ নভেম্বর চিঠি দেয়া হয়। পরে তিনি অপর এক চিঠিতে আরও ৭ দিন সময় চেয়ে নেন। পরে এদিন দেয়ায় ব্যাখ্যায় তিনি বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া কমপক্ষে ৪৫টি ইস্যু টেনে আনেন। যেখানে অনেকগুলো অমীমাংসিত বিষয়ও উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন: টেবিল চাপড়ে ভিসি ডিনকে বললেন 'বেয়াদব চুপ, বের হয়ে যান'

ডিনের দেওয়া সেই ব্যাখ্যার দুটি কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। এতে অধ্যাপক হেলাল নিজামী প্রথমে উল্লেখ করেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বিবৃতি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপক ও একটি অনুষদের ডিনকে উপাচার্য কর্তৃক ব্যাখ্যা তলবের নামে নোটিশ প্রদান কার্যত আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। নোটিশে যিনি (উপাচার্য) অভিযোগকারী; তিনিই বিচারক। কাজেই তাঁর কর্তৃত্ব এক্ষেত্রে সীমিত। এটি অজ্ঞতাপ্রসূত ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে ব্যর্থতা বলে প্রতীয়মান হয়।

ব্যবসায় প্রশাসন ডিন বলেন, আমি প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলছি, এটার জন্য আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। প্রথমত এটার ব্যাখ্যা দিতে আমি বাধ্য নই। আর তারা দুর্নীতি করছে না, সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়।

আরও পড়ুন: 'পরিবর্তন নয়, উপাচার্যকে আইনের শাসনে দায়বদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য'

যদিও তিনি চিঠিতে নিজের বক্তব্যের আলোকে ব্যাখ্যা ও প্রমাণ তুলে ধরেন। তিনি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন’ বক্তব্যের ব্যাখায় ৯টি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। বলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছরের মধ্যে তিনি সিনেটে রেজিষ্ট্রার গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন, সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন ও সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিতে পারেননি। আইনের শাসনে বিশ্বাসী কেউ এমনটা করতে পারেন না। বক্তব্যের বাকি দুটি বাক্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, প্রথমত তিনি উত্তর দেওয়ার জন্য ৩ দিনের জায়গায় ১০দিন সময় নিয়েছেন। এখন বলছেন তিনি প্রমাণ দিতে বাধ্য নন। বস্তুত তিনি কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই বলেই বিভিন্ন মীমাংসিত বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; যার প্রমাণ প্রশাসনের হাতে রয়েছে। অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী মূলত স্ব-বিরোধী বক্তব্যই দিয়েছেন।এর আগে গত ৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ডিনদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন ও সমাবর্তন নিয়ে বৈঠকে বসেন।

আলোচনার এক পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী সিন্ডিকেট নির্বাচন নিয়ে কথা তুলেন। এ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে অধ্যাপক হেলাল নিজামীর বাকবিতণ্ডা হয়। পরদিন বৈঠকে বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে বক্তব্যের প্রমাণসহ ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় হেলাল নিজামীকে। এরপর গত ১০ নভেম্বর আরও সাত কর্মদিবস সময় চেয়ে পাল্টা চিঠি দেন হেলাল নিজামী।


সর্বশেষ সংবাদ