রাতের খাবারের উপযুক্ত সময় কোনটি?

রাতে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে অবশ্যই রাতের খাদ্য গ্রহণ করে নেওয়া উচিত
রাতে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে অবশ্যই রাতের খাদ্য গ্রহণ করে নেওয়া উচিত  © প্রতীকী ছবি

সবকিছুরই নিয়ম আছে, এমনকি খাবার খাওয়ারও একটি সঠিক সময় আছে। কেননা খাবার শুধু খেলেই হল না, কখন খাচ্ছেন তার ওপরও কিন্তু নির্ভর করে শরীরের ভালো-মন্দ। খাবার খাওয়ার পর, তা যতই কম খাবার হোক না কেন, তা হজম করতে শরীরের একটা নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন হয়। তাই সঠিক সময়ে খাবার খেলে আপনার শরীর তা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারবে।                                                                    

ইউরোপ-আমেরিকায় সাধারণত সন্ধ্যা না হতেই রাতের খাবারের পাট চুকে যায়, যাকে বলা হয় ডিনার। আমাদের দেশেও গ্রামের মানুষ সাধারণত সন্ধ্যা রাতেই খেয়ে নেয়। অবশ্য আগে গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি রাত পর্যন্ত না খেয়ে জেগে থাকার উপায় ছিল না। এখন বিদ্যুৎ থাকলেও আগের সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। কিন্তু শহরের মানুষের অভ্যাস প্রায় বিপরীত। একটু বেশি রাতে খাওয়ার চলই বেশি। এর কারণ হিসেবে যান্ত্রিক জীবন যাপন এবং বিশাল কর্মব্যস্ততাই দায়ী। 

রাতের খাবার গ্রহণের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে রাতের প্রথম প্রহরের সূচনা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এটিকে আরো পরিষ্কার করে বলেন যে ‘শারীরিক সুস্থতার প্রশ্নে একজন মানুষকে অবশ্যই রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত। এরপর কিছুতেই কোনো ধরনের ভারী খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না।’ আবার কোনো কোনো গবেষক চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন যে রাতে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে অবশ্যই রাতের খাদ্য গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। বেশি রাত করে খেলে শরীরে টক্সিন জমতে শুরু করে। ফলে পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীরে মেদ বেড়ে যাওয়ার মতো অসংখ্য সমস্যা হানা দেয়। 

কখন খাবেন?
ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলা আদর্শ। ভরপেট খেয়েই শুয়ে পড়লে, হজমের সমস্যা হতে পারে। তার চেয়ে খাওয়া শেষ করে একটু হাঁটাচলা করুন, বাড়ির অন্য কাজ করুন। তা হলে হজমেও সুবিধা হবে, আবার ঘুমও তাড়াতাড়ি আসবে।

দেরিতে খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে-

বদহজম
খুব রাতে খেলে অনেক খাবারই হজম করতে সমস্যা হয়। এবং কোন খাবারে কার সমস্যা হবে, সেটা সকলের জন্য একই ভাবে নির্ধারিত করা যায় না। তাই আপনাকেই বুঝতে হবে কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে। এবং খাওয়ার পর একটু সময় দিন পেটকে তা হজম করতে। বদহজম হয়ে পেট ফুলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাতের ঘুমও ঠিকমতো হবে না। তাতে শরীর আরও ক্লান্ত হয়ে পড়বে।

বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা
বেশি রাতে খেলে একটু অসুবিধা হয়। ঢেকুর উঠে, গলা জ্বালা করে। মাথাব্যথা, ফুসফুসে প্রদাহ হয়। এছাড়াও রাত ১১টায় খাবার খান অনেকেই। বেশি দিন এ রকম হলে খাদ্যনালির ক্যানসার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

রাতে সঠিক সময়ে খাওয়ার সুফল

হজম নিয়ন্ত্রণ
ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন। এতে খাবার হজম হওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাবে। এতে আপনি অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং বদহজমের মতো সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকবেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ
রাতে জলদি খাবার খেলে শরীরের ক্যালোরি দ্রুত ঝরে। ফলে ওজন পরিচালনায় তা সহায়তা করতে পারে। 

ঘুমের ওপর প্রভাব 
গবেষণা দেখা গেছে যে, তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেলে ভালো ঘুম হয়। গভীর রাতে খেলে শরীর খাবার হজম করতে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই আগেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন। এতে শরীর রাতে বিশ্রামের সময় পাবে। 

এনার্জির মাত্রা বেড়ে যায়
রাতের খাবার তাড়াতাড়ি করলে শরীর পুষ্টি শোষণের জন্য আরও বেশি সময় পাবে। শরীর শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় থাকে। ঘুমানোর আগে খেলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার টিপস: ওজন বাড়াতে যদি না চান তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ডিনার সেরে নিন। যদি আপনি রাত ১০টায় ঘুমাত যান তাহলে ডিনার সেরে নেবেন ৭টার মধ্যে।

লেখক: নিউট্রিশনিস্ট, আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার 


সর্বশেষ সংবাদ