চোখে দিয়ে গুলি ঢুকে মাথায় আটকে যায় শিশু আহাদের

এক দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু

চোখে দিয়ে গুলি ঢুকে মাথায় আটকে যায় শিশু আহাদের
চোখে দিয়ে গুলি ঢুকে মাথায় আটকে যায় শিশু আহাদের  © সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন আবুল হাসান। গত ১৯ জুলাই বিকেলে সবাই বাসাতেই ছিলেন। এ সময় তাদের বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। বারান্দায় এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা ও মাঝে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল ছোট ছেলে আবদুল আহাদ (৪)। হঠাত একটি গুলি আহাদের ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরে ঢুকে যায়। মুহূর্তেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে সে।

আবুল হাসান ভেবেছিলেন হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গেছে আহাদ। কিন্তু তাকে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের। ছেলের চোখ, মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর।

ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত হাসপাতাদের দিকে ছোটেন হাসান। তবে বাড়ির নিচে এলেই তাঁকে বাধা দেয় অস্ত্রধারীরা। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায়। আহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে বাড়ি আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসানের। রায়েরবাগে ১১ তলা একটি বাড়ির আট তলায় স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদকে নিয়ে থাকতেন তিনি। 

নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে হাসপাতালে চিকিৎসকরা বলেন, গুলি মাথার মধ্যে আছে। কোন অবস্থানে আছে, তা বুঝতে সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যান করতে নেওয়া হলে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। এদিকে সিটিস্ক্যানও জরুরি। পরদিন শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার মরদেহ বুঝে পান স্বজনরা। তারপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল হাসান বলেন, ‘সবকিছু যেন চোখের পলকে ঘটে গেল। আমার আদরের ছোট ছেলেকে হারালাম। এ নিয়ে আর কী বলব!’

শিশু আহাদের চাচা মোখলেসুর রহমান জানান, বাড়িতে আগে পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো। 


সর্বশেষ সংবাদ