ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করবেন যেভাবে
- আমির হামজা আসিফ
- প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৬ PM , আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৬ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়া কিংবা চান্স পাওয়ার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম। কিন্তু কীভাবে পড়লে বা প্রস্তুতি নিলে চান্স পাওয়া সহজ হয়, সেটা ভালো বলতে পারবেন যারা এ পথ পাড়ি দিয়েছেন। আমি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানে সেরা দশে স্থান করেছি— আজ সে অভিজ্ঞতাই শেয়ার করবো।
যেকোনো ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে অবশ্যই কলেজ লাইফের শুরু থেকে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। মূল বইগুলো ফোকাসে রেখে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ সকল প্রশ্ন মূল বই থেকেই আসে। তাই মূল বইয়ের উপর দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ভালো করতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞান এই চারটি বিষয়েই সমান গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি নিজের প্রস্তুতি যাচাই ও ভুল চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনমূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
হাতে ক্যালকুলেশন করার অনুশীলন করতে হবে। পাশাপাশি অনেক বেশি এমসিকিউ প্র্যাকটিসের অভ্যাস রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাটগুলো মনে রাখতে হবে। মূল বই বারবার ভালোমতো পড়তে হবে। এভাবেই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব।
পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেও একটি মূল বই সেট করে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইসহাক স্যারের বইটি ভালো পছন্দ হতে পারে। ফিজিক্সের পড়ার ক্ষেত্রে শুরুতে প্রতিটি অধ্যায়ের সকল কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে ফেলতে হবে এবং সকল সূত্র আত্মস্থ করতে হবে। পরবর্তীতে নিজের পছন্দমতো বই থেকে ওই অধ্যায়ের সকল সমস্যা সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য এগিয়ে থাকতে চায় তবে সে প্রশ্নব্যাংক ফলো করতে পারে, এটি তাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। পাশাপাশি তার এমসিকিউ প্রশ্ন সমাধান করার দক্ষতা ও স্পিড বাড়াবে।
এছাড়া যেসকল অধ্যায় পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত (যেমন - ভেক্টর, বল ও শক্তি) এগুলোতে একাধিক কনসেপ্টের সমন্বয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে জানতে হবে। তবে খুব বেশি কঠিন প্রশ্ন সমাধান করতে গিয়ে সময় নষ্ট করাকে করাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরুৎসাহিত করি। কেননা এসবে অনেক সময় নষ্ট হয় ও আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাই আমাদের সিলেবাসের সাথে সম্পৃক্ত এবং গতানুগতিক ধারার প্রশ্নগুলো বার বার ভালোমতো অনুশীলন করতে হবে এবং হাতে ক্যালকুলেশনের অভ্যাস রাখতে হবে।
রসায়ন: রসায়নের ক্ষেত্রেও মূল বই সেট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি গুহ স্যারের বইকে মূল বই এবং হাজারী স্যারের বইকে সহায়ক বই হিসেবে ব্যবহার করতাম। কেউ চাইলে এগুলো ফলো করতে পারে। রসায়নে প্রতিটি অধ্যায় পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কোনগুলি গুরুত্বপূর্ণ টপিক এটি বুঝানোর জন্য একজন ভালো শিক্ষক নির্বাচন করা দরকার।
কারণ আমাদের রসায়ন বইগুলোতে প্রতি অধ্যায়েই বেশ কিছু টপিক থাকে যেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ। তাই গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বেশি সময় নিয়ে, ভালোভাবে, বারবার করে পড়তে হবে ও মনে রাখতে হবে। গাণিতিক অংশগুলো নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে এবং তাত্ত্বিক অংশগুলো বারবার পড়তে হবে। প্রশ্নব্যাংক থেকে এমসিকিউ অনুশীলনের অভ্যাস করতে হবে। জৈব রসায়ন অধ্যায়টি বার বার করে পড়তে হবে কারণ এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন অধ্যায়। তাহলেই একজনের পক্ষে ভালো করা সম্ভব।
উচ্চতর গণিত: উচ্চতর গণিত বিষয়ের জন্য শুরু থেকেই নিজের পছন্দ মতো একটি মূল বই সেট করে নিতে হবে। একাধিক বইয়ের পেছনে না দৌড়িয়ে, একটি বই পুরোপুরি ভালোভাবে পড়াটা বেশি কার্যকর। এক্ষেত্রে কেতাবউদ্দিন স্যারের বইটি বেশ ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। গণিতের ক্ষেত্রে প্রতি অধ্যায়ের সকল কনসেপ্ট ভলোভাবে শেখার পর অনুশীলনীর সকল প্রশ্ন নিজে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
সমাধান বই ব্যবহার করাকে আমি নিরুৎসাহিত করি কেননা এটি ব্যবহারে স্টুডেন্টদের চিন্তা করার দক্ষতা কমে যায়। গণিতে ত্রিকোণমিতি ও ক্যালকুলাস খুব গুরুত্ব দিতে হবে কেননা এগুলো থেকে পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন আসে। জ্যামিতির সমস্যাগুলো চিত্র ব্যবহার করে সমাধান করার জন্যে উত্সাহিত করা হলো। অনুশীলনের ক্ষেত্রে মূল বই ফলো করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। বেশি বেশি এমসিকিউ অনুশীলন করে নিজের দক্ষতা ও স্পিড বাড়াতে হবে।
জীববিজ্ঞান: উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য হাসান স্যার ও প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমল স্যারের লেটেস্ট এডিশনের বই ফলো করা ভালো। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো লাইন বাই লাইন ভলোমতো পড়তে হবে এবং প্রচুর এমসিকিউ অনুশীলন করতে হবে। প্রশ্নব্যাংক ফলো করতে হবে। তাহলেই ভালো করা সম্ভব।