সহকারি জজ নিয়োগ পরীক্ষা: প্রিলিমিনারি ও লিখিতের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

  © লোগো

আগামী ৪ মে সপ্তদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১০০ জন সহকারি জজ নিয়োগ দেওয়া হবে। আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে সহকারী জজ হওয়া। তাই বিজেএস প্রস্তুতি নিতে হবে সতর্ক মূলকভাবে, মনোযোগের সাথে। একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে প্রস্তুতি নিবে; নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিচ্ছেন ১৫তম বিজেএসে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. সোহেল রানা। অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-

সহকারী জজ নিয়োগের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন তিনটি ধাপ তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে থাকে।

বিজেএস প্রিলিমিনারি
জেনারেল পার্টের জন্য ১০ম থেকে সর্বশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি ও  বিজেএস এর প্রিভিয়াস ইয়ারের (৩য় থেকে সর্বশেষ) প্রিলিমিনারির প্রশ্ন সলভ করতে হবে ব্যাখ্যাসহ। এক্সামের আগের তিন মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়াও জরুরি।  সাথে ভালো কোনো পত্রিকা পড়লে ভালো হয়। এর সাথে বিজেএস সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো যেকোনো প্রচলিত বই  (প্রিসেপ্টর এর ডাইজেস্ট-বিসিএস, বেটার) থেকে পড়া যেতে পারে।

সাধারণত বিজেএসের লিখিত পরীক্ষার টপিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে পারলে অটোমেটিক্যালি প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি হয়ে যায়। আর আইন অংশের জন্য সিলেবাসের সব আইনের বেয়ার অ্যাক্ট এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বুঝে বুঝে পড়ে বইতেই সাইড নোট করে রাখা অথবা খাতায় নোট করে রাখা উচিত। আইন অংশে বাংলায় আইনটাকে ভাল করে বোঝার জন্য, ভাল কোনো প্রচলিত আইনের বাংলা ভার্সন এর বই ফলো করা যেতে পারে।বিজেএস এর বিগত প্রিলিমিনারি ও রিটেনের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলেই গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও টপিক সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যাবে। আইনের প্রস্তুতির সময় লিখিত প্রস্তুতি (বিস্তারিত প্রস্তুতি) নিলেই আর আলাদাভাবে প্রিলিমিনারির জন্য পড়তে হয় না। আইন পাঠ বইটা প্রিলিমিনারির জন্য বেটার।

বিজেএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

ক. বাংলা
ব্যাকরণ এবং সাহিত্য অংশের জন্য বিসিএসের ১০ থেকে সর্বশেষ বিসিএস রিটেনে আসা বিগত সালের প্রশ্ন (শুধু যেই টপিক গুলো বিজেএস এর সিলেবাসের সাথে মিল আছে এই অংশ) ও বিগত বিজেএস এ আসা প্রশ্ন গুলো সমাধান করে ফেলতে পারেন। এটা আপনাকে প্রশ্ন বিশ্লেষণে সহায়তা করবে।আর বিগত প্রশ্নগুলো থেকে যে প্রশ্নগুলো আসবে সেগুলো আপনি না পারলেই পিছিয়ে পড়বেন। এর সাথে বাংলা ২য় পত্র (নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ড বই- মুনীর চৌধুরি -পুরাতন ভার্সন) থেকে ব্যাকরণ অংশ পড়বেন।এর মধ্যে ধ্বনিতত্ত্ব, ধ্বনির পরিবর্তন, কারক, সমাস, বাক্য শুদ্ধি, বাক্য রুপান্তর, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা - এই টপিক গুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। সৌমিত্র শেখরের সাহিত্য জিজ্ঞাসা থেকে সাহিত্য অংশ (সিলেবাসে থাকা সাহিত্যিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন), এক কথায় প্রকাশ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা/প্রবাদ প্রবচন, পারিভাষিক শব্দ পড়তে পারেন।এই বই থেকে এই টপিকগুলো বেশি কমন পড়ে থাকে। আর বাংলা রিটেন অংশের (চিঠি/আবেদন/ রচনা/প্রতিবেদন ইত্যাদি) জন্য শুধু নিয়মগুলো জানার জন্য প্রফেসরস/অ্যাসিউরেন্স/ওরাকল ইত্যাদির জন্য যে কোন বিসিএস লিখিত বই ফলো করতে পারেন।

খ. ইংরেজি
গ্রামার এবং ইংরেজি সাহিত্য অংশের জন্য ১০ম বিসিএস থেকে সর্বশেষ বিসিএস রিটেনে আসা বিগত সালের প্রশ্ন(শুধু যেই টপিক গুলো বিজেএস এর সিলেবাসের সাথে মিল আছে এই অংশ) এবং  বিগত বিজেএস এ আসা প্রশ্ন গুলো সমাধান করে ফেলতে পারেন। গ্রামার অংশের জন্য প্রচলিত যেকোনো গ্রামার বই ফলো করতে পারেন। সাহিত্য অংশের জন্য - Sharif Chowdhury এর বইটা ফলো করতে পারেন। ইংরেজি রিটেন অংশের (Letter/ Application/ Essay/Report/Precis' ইত্যাদি) জন্য শুধু নিয়ম গুলো জানার জন্য প্রফেসরস/ অ্যাসিউরেন্স/ ওরাকল ইত্যাদির জন্য যে কোন বিসিএস লিখিত বই ফলো করতে পারেন।

গ. গণিত
৬ষ্ঠ-নবম শ্রেণীর সাধারণ গণিত বই।সম্ভব হলে ২০১০ সালের আগের বইগুলো ফলো করবেন। কারণ আগের বইগুলোতে ম্যাথ বেশি থাকে। গণিতের সহায়ক গাইড বই: বিসিএস সংক্ষিপ্ত সাধারণ গণিত (কনফিডেন্স এর)। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণীর বিজেএস সিলেবাসের প্রায় সবগুলো টপিক ই আছে। ম্যাথ এর জন্য- সরল (প্রায় সবসময় ক্লাস সিক্সের বই থেকে আসে। নতুন/পুরাতন ভার্সন যেন কোনো বই থেকেই আসতে পারে।) যেহেতু সময় কম,তাই যাদের গণিত ভীতি রয়েছে তারা শুধু বর্তমান ভার্সনের বইটাই ফলো করতে পারেন। কাজ, নল-চৌবাচ্চা, ঐকিক নিয়ম, পরিমাপ, সুদাসল, শতকরা-লাভক্ষতি, সরল ও চক্রবৃদ্ধি মুনাফা, মান নির্ণয়, সমাধান ও সমাধান সেট নির্ণয় সংক্রান্ত ম্যাথগুলিই বেশী আসে এক্সামে। জ্যামিতির জন্য বৃত্ত সংক্রান্ত একটা জ্যামিতি প্রায়ই এসে থাকে।সহজ টেকনিক হিসেবে বৃত্ত সংক্রান্ত জ্যামিতি গুলো করে গেলেই ১টা কমন পেতে পারেন।

ঘ. বিজ্ঞান
বিগত বিসিএসে আসা বিজ্ঞান অংশের প্রশ্ন (যে অধ্যায় গুলো বিজেএস সিলেবাসের সাথে মিল আছে)।সাধারণত ৩৫তম বিসিএসের আগে যে-রকম প্রশ্ন হতো, অনেকটা সেরকম প্রশ্ন বর্তমানে আসে।তাই আগে ১০ম থেকে সর্বশেষ বিসিএস লিখত পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন(বিজেএস এর সিলেবাসের সাথে মিল রেখে) আগে সমাধান করুন। অনেকক্ষেত্রেই বিগত সালের বিসিএসে আসা প্রশ্ন জুডিশিয়ারিতে আসে।

সহায়ক বই
ওরাকল বিসিএস লিখিত বিজ্ঞান অথবা Science Hour পড়তে পারেন। এবং বিগত বিজেএসে আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। সহায়ক বই:ক্লাসিক পাবলিকেশন- বিজেএস বিজ্ঞান। 

বিসিএস ও জুডিশিয়ারির বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে প্রায়  ৪০% প্রশ্ন কমন পেতে পারেন। এজন্য বাকি অংশের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই থেকে বিজেএস সিলেবাসে থাকা কিছু টপিক পড়লে মোট প্রায় ৮০-৯০% এর মতো কমন পেতে পারেন। বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক: চোখ, আলো, শব্দ, হৃদ্‌যন্ত্রের যত কথা, খাদ্য, রোগ-ব্যাধি, রক্ত, প্রাত্যহিক জীবনে তড়িৎ, অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার এই টপিক গুলো ৬ষ্ঠ থেকে নবম-দশম এর সাধারণ বিজ্ঞান বই থেকে অবশ্যই বিস্তারিত দেখতে হবে। আর সম্ভব হলে সিলেবাসের সব টপিক ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণির বই থেকে পড়বেন। কারণ ইদানীং প্রশ্ন প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে।বোর্ড বই থেকে বেশি আসে প্রশ্ন। বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান আগে করে নিলে আপনি বুঝতে পারবেন, সাধারণ বিজ্ঞান থেকে কোন ধরনের প্রশ্ন হয়। তাই অবশ্যই বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করবেন।

ঙ. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক
রিটেন এক্সামের আগের তিন-চার  মাসের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো গুগল থেকে দেখতে পারেন এবং নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন আপডেট থাকার জন্য। এর বাইরে বাজারে প্রচলিত সাম্প্রতিক টপিক নিয়ে প্রচলিত ছোট কোন বই পড়তে পারেন লিখার মান বাড়াতে। 

আইন অংশের লিখিত প্রস্তুতি
আইন অংশে প্রায় ৫০-৬০% প্রশ্ন রিপিট হয় (হুবহু না হলেও অন্তত একই ধারা বা টপিক থেকেই প্রশ্ন হয়ে থাকে)। আইন অংশে ভাল করতে হলে, বিগত সালের আইন অংশে আসা প্রশ্নগুলো অবশ্যই  খুব ভালো করে পড়তে হবে আগে।যারা প্রথম বার বিজেএস দিবেন তারা আইন অংশে সর্বপ্রথম বিগত সালের রিটেন প্রশ্ন গুলো পড়ে নিবেন। এর পরে ধারণা নিয়ে ওই ধারা ও টপিকগুলো বেশি বেশি পড়বেন। পাশাপাশি প্রত্যেকটি আইনের মাদার সেকশনগুলো পড়তে হবে। ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় ধারা বাদ দিয়ে পড়বেন। অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার জন্য বিগত সালের প্রশ্নই আপনাকে পথ দেখাবে কি কি টপিক আর কোন কোন ধারা আপনাকে পড়তে হবে। 

সহায়ক বই
ইংরেজিতে লেখা (BJS Master by Mini Law School)- এই বইটা একটু বেশি গোছানো মনে হয়েছে; যারা ইংরেজি লিখবেন তাদের জন্য। এছাড়া আয়েশা সিদ্দিকা এমার বিগত বিজেএস এর প্রশ্ন সমাধান টাও ফলো করতে পারেন। বাংলা ভার্সনের জন্য; আয়াজ আজাদ অথবা মিনি ল’স্কুল এর যেকোনো একটি বই ফলো করতে পারেন। এই বইগুলো থেকে শুধু বিগত প্রশ্ন, ধারা ও টপিক সম্পর্কে ধারণা নিবেন। উত্তর গুলো নিজের মতো সাজিয়ে নিবেন। যদি সময় থাকে হামিদুল হক স্যারের বিচার প্রক্রিয়া বই থেকে বিভিন্ন আইনের গুরুত্বপূর্ণ টপিক ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তগুলো দেখতে পারেন যেগুলো প্রব্লেম প্রশ্ন সমাধানে সহায়ক হতে পারে।এর বাইরে সিলেবাসের প্রত্যেক আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও টপিক ও ডক্ট্রিনগুলো পড়তে হবে।

যেমন হবে লেখার ধরণ
ক. ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নের ক্ষেত্রে: নীল কালি ব্যবহার করতে পারেন সেকশন গুলো মার্ক করার জন্য। ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নগুলো তিন ভাগে অ্যান্সার করবেন। 1. Introductory part (২/৩ লাইনে) 2. Body part (এখানেই সেকশনসহ মূল প্রশ্নের উত্তর) 3. Concluding remark (২/৩ লাইনে)। প্রশ্নগুলোর উত্তর পয়েন্ট করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন: Representative suit:, Conditions of this suit: এভাবে।

খ. প্রবলেমেটিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে: প্রবলেমেটিক প্রশ্নের উত্তর দিবেন চার ভাগে ভাগ করে। 1. Fact: এখানে প্রশ্নের ফ্যাক্টটাই তুলে দিবেন।বড় ফ্যাক্ট হলে শর্ট করে লিখে দিবেন। 2. Issue:এখানে প্রশ্নে থাকা ইস্যুটাই মূল ইস্যু।এছাড়া আর ও অতিরিক্ত ইস্যু কোন কোন প্রশ্ন দিতে পারেন। প্রশ্নের ধরণ বুঝে ইস্যু নির্ধারণ করতে হয়।3. Decision: এক বা দুই লাইনে উত্তর- যেমন গিফট টা ভ্যালিড এমন। এখানে ল কিংবা সেকশন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। 4. Reasoning as to the issue:এই অংশে সেকশন ও লসহ Reasoning উল্লেখ করবেন সিদ্ধান্তের পক্ষে।

গ. খাতার প্রেজেন্টেশন: খাতার প্রেজেন্টেশনের কারণে একই কন্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও একজন আরেকজনের চেয়ে প্রতি সাবজেক্টে ২ করে বেশি পেলে ১০ সাব্জেক্টে ২০ নম্বর এগিয়ে থাকবে। যা এই তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনেক নম্বর। এজন্য খাতায় প্রেজেন্টেশনটা একটু সুন্দর করার চেষ্টা করবেন। হাতের লিখা যেমনই হোক, সেটা যেন বোধগম্য হয় এবং বোঝা যায় একটি প্রশ্ন অন্য প্রশ্ন থেকে আলাদা।


সর্বশেষ সংবাদ