বিদায় সংবর্ধনার নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ে নেমেছে ছাত্রলীগ

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিদায়ী ছাত্রদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ১ হাজার টাকা কেটে নিচ্ছে ছাত্রলীগ। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে টেবিল পেতে বসে চাঁদা আদায় করে। আর তা চলবে বুধবার পর্যন্ত। বিদায় নেয়া এক হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এভাবে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।

পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদায় অনুষ্ঠানের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে তাদের সম্মতি নেই। এই অনুষ্ঠান করার কথা বলা হচ্ছে ২০ জানুয়ারির পর। এর আগেই বিদায়ী ছাত্ররা ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবেন।

পলিটেকনিক সূত্রে জানা যায়, আটটি বিভাগের অষ্টম পর্বের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রশিক্ষণ (ইন্টার্নশিপ) ভাতা ও জামানতের টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার। এদিন সকালে সিভিল, দুপুরে পাওয়ার এবং বিকেলে কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রো মেডিকেল এবং বুধবার মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিকস ও মেকাট্রনিকস বিভাগের টাকা দেওয়ার কথা। এই আট বিভাগের ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সবাই ইন্টার্নশিপের ১৩ হাজার ও জামানত রাখা ৪০০ টাকা করে ফেরত পাওয়ার কথা। তবে তারা পাচ্ছেন ১২ হাজার ২৫০ টাকা। ১৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে কোর্স সমাপনী সনদ বাবদ কর্মচারীরা ৫০ টাকা আর মসজিদের উন্নয়নের জন্য ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন মুয়াজ্জিন। সম্মেলন কক্ষের পাশেই চেয়ার-টেবিল পেতে বসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চাঁদা আদায় করছেন। সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের তারা বিদায় অনুষ্ঠানের নামে নিবন্ধন করতে বাধ্য করছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ফরম পূরণ করে ১ হাজার টাকা আদায় করছেন।

টাকা কেটে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জীহান বলেন, বিদায় অনুষ্ঠান ২০ জানুয়ারি। প্রত্যেককে এ বিষয়ে টোকেন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি নিজেও টাকা দিয়েছেন।

সাধারণ ছাত্রদের দাবি, বিদায় সংবর্ধনা আয়োজনের কথা তারা বলেননি। হঠাৎ ছাত্রলীগকে এভাবে টাকা নিতে দেখছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্র বলেন, ‘আমরা তো আগে কিছু জানতাম না। আজই দেখছি ছাত্রলীগ টাকা আদায় করছেন। কারা দায়িত্ব দিয়েছেন, জানি না।’

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুর রশীদ মল্লিক বলেন, এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানের বা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর সামান্যতম সম্মতি নেই। আগে কখনও এমনটা করা হয়নি। অনুষ্ঠান করার জন্য টাকা তুলে দিতে প্রস্তাব পেয়েছিলেন জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, তিনি তখন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তুলতে পারবেন না। কারণ, যে ছাত্র ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তার জন্য কীসের অনুষ্ঠান। তাদের তো প্রতিষ্ঠানে আর থাকার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও গায়ের জোরে টাকা তোলা হচ্ছে বলে শুনেছেন অধ্যক্ষ। কেউ অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে দাবি করেন আবদুর রশীদ।

তিনি আরও বলেন, যে রসিদ দেওয়া হচ্ছে, সেটা ওরাই (ছাত্রলীগ) বানিয়েছে। এই টাকা দেওয়া উপলক্ষ্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, এই আশঙ্কায় ১১ জানুয়ারি পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সকালে পুলিশ এসেছিল, তারপর চলে গেছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে পুলিশ চেয়েছিল। নগরের চন্দ্রিমা থানার পুলিশ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল। কোনো ঝামেলা হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ