যেভাবে কাটছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতাদের ঈদ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৬ AM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ AM

বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আবারো স্বমহিমায় ফিরেছে সবার মাঝে। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মাঝেই বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। ঈদ আনন্দের বাইরে নেই বেসরকারি শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শিক্ষক সংগঠনগুলো। কোথায় ঈদ কাটাচ্ছেন তারা? কেমন কাটছে তাদের ঈদ— এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা জনপ্রিয় দুই সংগঠনের দুই নেতার ঈদ আনন্দ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম এর সভাপতি প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘ঈদ-উল-ফিতরেই সাধারণত বাড়ি আসা হয়। উদ্দেশ্য পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিশেষ করে মায়ের সাথে ঈদ উদযাপন করা এবং কিছু সামাজিক সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। ব্যস্ততার কারণে এই সময়টা ছাড়া বাড়িতে আসার খুব একটা সুযোগ হয় না। তাছাড়া বাড়িতে তেমন কেউ থাকেও না।’
এ শিক্ষক নেতা জানান, ‘এবারের ঈদের দিনটা আমার ভোর ৪ টায় শুরু হয়েছে। কুমিল্লার একটি ঈদগাহে ঈদের নামায পড়ানোর দায়িত্ব থাকার কারণে ভোর ৫ টায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে বের হই। মুসল্লিদের নিয়ে ঈদ-উল-ফিতর এর নামায আদায় শেষে তাদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে ফের বাড়ি ফিরে আসি এবং পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, এলাকাবাসী এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ওভার টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে। সন্ধ্যায় ব্রাইট ফিউচার এসোসিয়েশন (স্থানীয় সংগঠন) এর গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করি এবং সদস্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করি। মোটাদাগে বলা যায় ব্যস্ততা এবং আনন্দ উপভোগের মধ্য দিয়ে এবারের ঈদের দিনটি কেটেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়াত বাবা এবং মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত নিলুফা-হরমুজ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও পারিবারিক অর্থায়নে ৫০টি পরিবারের কাছে ঈদ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি এবং অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে আরও কিছু পরিবারকে। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সবসময় কিছু করার চেষ্টা করি এবং এর মাধ্যমে ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায় বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তবে ছোটবেলার ঈদ এবং এখনকার ঈদের মধ্যে ঢের পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘ছোট বেলায় ঈদে একটি নতুন জামায় যে আনন্দ খোঁজে পেতাম এখন হাজারটা পেলেও ঐ একটি নতুন জামার আনন্দ খোঁজে পাওয়া যায় না। এটা হয়তোবা বয়সের কারণে। এখন পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য নতুন জামা কিনে দিয়ে আনন্দ অনুভব করি। মাউশির দায়িত্বহীনতার কারণে এই ঈদে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী সিকি ভাগ বোনাস এবং বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করতে না পারার কষ্ট কিছুটা হলেও ঈদের আনন্দকে ম্লান করেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এনটিআরসিএ সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম (বিটিএফ) এর সভাপতি মো: হাবিবুল্লাহ রাজু পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তালিমনগর গ্রামে ঈদ উৎযাপন করছেন। শৈশবে ঈদের আনন্দ ও এখনকার আনন্দের মধ্য অনেক পার্থক্য আছে জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, ঈদের ঠিক পূর্বের দিন সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা ও আত্মীয় স্বজন থেকে ঈদের সালামি নেয়া ছিলো আমাদের প্রধান আকর্ষন।
হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, ‘ঈদের দিন এক প্রকার ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই পার করতে হয়। সকালে উঠেই ফজরের নামাজ পরে, গোসল করে বাবা, ভাই, আত্মীয় এবং চাচাদের সাথে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্য যাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। নামাজ শেষ করে বাসায় এসে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া একটা রুটিন থাকে।যেহেতু শিক্ষকদের সংগঠনের সাথে আমি জড়িত আছি তাই প্রিয় শিক্ষকদের সাথে যতোটা পারি তাদের সাথে অনলাইনের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও ভালবাসা জ্ঞাপন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিকেলে বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও আড্ডা দিয়ে শৈশবের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি কিছুটা ফিরে পাই সেই সাথে অসাধারণ মুহূর্ত কিছু সময় পার করি। পরিবার পরিজনের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে সময় কাটাই। ঈদ প্রতিটি মানুষের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, হাসি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র পরবর্তী ঈদ থেকে শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব বোনাস দিয়ে শিক্ষকদের মাঝে আরও ভালো ভাবে ঈদ উৎযাপন করার সুযোগ দিবেন এটাই হোক ঈদ উৎসবের আমাদের প্রত্যাশা। সবাইকে ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।’