ঢাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই, ডিসেম্বরে হচ্ছে না ভোট
- তাওসিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ PM
প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনের অন্যান্য প্রস্তুতি চলতে থাকে। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের এক-তৃতীয়াংশ সময় কেটে গেলেও নির্বাচন আয়োজনের কোনো প্রস্তুতি নেই।
শিক্ষকদের অভিমত, ডিসেম্বরের বাকি সময়ে তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক নেতারা বর্তমান ‘অনির্বাচিত’ কমিটির নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন করবেন না বলে জানান।
শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখনো নির্বাচনের তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা দু-একদিনের মধ্যেই সবার সাথে বসব। বসে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন দিয়ে দিব।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৪ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ভোট বর্জন করায় সেবার নির্বাচনে বিনা ভোটে সব পদে জিতেছিল আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান মনে করেন সমিতির বর্তমান কমিটি অনির্বাচিত। তাদের হাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যাবে না।
তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাদা দলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও শিক্ষক সমিতি বিপরীতমুখী অবস্থান নেয়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমরা এই শিক্ষক সমিতিকে প্রত্যাখ্যান করেছি। তার ধারাবাহিকতাই ৫ আগস্ট যখন নতুন স্বাধীনতা লাভ করলাম এই অনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির কোন কার্যকারিতা থাকলো না। পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতির কোনো কার্যক্রমও আমরা দেখিনি। কিন্তু সাদা দল বর্তমান সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বদা সহযোগিতা করছে। প্রতিবছর শিক্ষক সমিতি একটা ট্যাক্স মেলা আয়োজন করে। কিন্তু এবার সেটা করেনি। সাদা দল অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে সেটা করেছে। ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় র্যালিতেও সমিতির কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতি যেখানে নাই সেখানে সাদা দল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে ছিল। নির্বাচন আদৌ হবে কিনা আমি সন্দিহান। এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এটা আমার ধারণা। শিক্ষকরা বিশেষ করে সাদা দল এখন প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নানান কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে।
নির্বাচন ইস্যুতে কোনো দাবি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার কাছে দাবি করব? শিক্ষক সমিতি তো এক্সিস্ট করে না। তবে প্রশাসনের সাথে সাদা দল নিশ্চয়ই আলাপ করবে। আলাপ করে ঠিক করবে কারা নির্বাচনের আয়োজন করবে। আশা করি সাদা দল অত্যন্ত স্মার্টলি হ্যান্ডেল করবে। তবে প্রশাসন এই মুহূর্তে এই নির্বাচন করতে পারবে কিনা সন্দিহান লুৎফর রহমান।
জানা যায়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৪ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ভোট বর্জন করায় সেবার নির্বাচনে বিনা ভোটে সব পদে জিতেছিল আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। তাছাড়া নীল দলের বাইরে অন্য কোনো প্যানেল বা প্রার্থী ছিল না সেই নির্বাচনে।
সেবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা। এছাড়া বিনা ভোটে সহ-সভাপতি হয়েছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুস ছামাদ, কোষাধ্যক্ষ পদে তৎকালীন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নীল দলের নির্বাচিতরা ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান (জিয়া রহমান), কলা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া, চারুকলা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, আইন অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শামসুন নাহার হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ ড. লাফিফা জামাল, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ।