দিবস উদযাপন কমিটি থেকে তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম

চলতি মার্চ মাসে জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৭ সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন ওই তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বিতর্কিত উল্লেখ করে তাদের অপসরণ দাবি করেছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চলতি মার্চ মাসজুড়ে একাধিক জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে গঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সদস্যের কমিটি থেকে ‘বিতর্কিত’ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। রবিবারের (৩ মার্চ) মধ্যে এ তিন শিক্ষক কর্মকর্তার নাম দিবস উদযাপন কমিটি থেকে প্রত্যাহার না করলে আসন্ন দিবসগুলোর অনুষ্ঠান ‍পৃথকভাবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে।

শনিবার (২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে। এ কমিটির নেতৃবৃন্দ গেল ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় দিবস উদযাপনেও দায়িত্ব অবহেলা করেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ওই তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান (আহ্বায়ক), প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী (সদস্য) ও শিক্ষকদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন (সদস্য)।

গেল ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আবাসিক হলসমূহে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি। এমনকি এ দিনটি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতঃপূর্বে যেখানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে, নিয়মিত শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে— সেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের আমলে প্রগতিশীলতার চর্চা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। 

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংগঠনের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের প্রতিষ্ঠানকে ফুল দেওয়ার জন্য নাম ঘোষণাকে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের অব্যবস্থাপনা বলে দায়ী করে শিক্ষক সমিতি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি উপাচার্যের কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে উপাচার্যের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর মদদে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়।

পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নামে সদর দক্ষিণ থানায় জিডি করে। 
ওই ঘটনায় প্রক্টরের অপসারণের দাবি জানিয়ে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় সমিতি। পরে প্রশাসন দায় সারা তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

শিক্ষক সমিতি বিবৃতিতে বলেছে, ‘ঘটনাসমূহের ফলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য সন্ত্রাসীদের লালনপালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা এবং একাধারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বারংবার চিরাচরিত রীতি, অনুক্রম ও পরম্পরা লঙ্ঘন করেই চলেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক জানান, উদযাপন কমিটি থেকে যদি তাদেরকে প্রত্যাহার করা না হয়, তবে  শিক্ষক সমিতি থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পৃথকভাবে স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে কাজী ওমর সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো মন্তব্য নেই বলে তিনি জানান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও মো. জাকির হোসেনের সঙ্গেও মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

চলতি মার্চ মাসে জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১৭ সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন ওই তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে তাদের অপসরণ দাবি করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ