উপাচার্যরা কে কোথায় ভোট দেবেন

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক আবদুল মঈন, অধ্যাপক নূরুল আলম ও অধ্যাপক সেলিনা আখতার
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক আবদুল মঈন, অধ্যাপক নূরুল আলম ও অধ্যাপক সেলিনা আখতার  © টিডিসি ফটো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে আজ রোববার (৭ জানুয়ারি)। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন দেশের মানুষ। এর মাধ্যমে ভোটাররা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা জানিয়েছেন, তারা নিজেরাও নিজেদের ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ভোট দেবেন নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লাহারকান্দি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লাহারকান্দি ফরিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘আমি লক্ষ্মীপুরে আমার নিজ গ্রামে ভোট দেব। কোনো কারণে যদি ঢাকায় থেকে যেতে না হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। আমাদের আসনে আমার ভাই শাহজাহান কামাল দীর্ঘদিন যাবত নির্বাচন করেছেন। নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আমার ভাই নেই। তারপরও আমি আমার নিজ আসনে ভোট প্রদান সম্পন্ন করব।’

তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এবার শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারেও তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় সবগুলো দলের ইশতেহারে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি ও শিক্ষার অগ্রগতিসহ এমন কিছু কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটা মূলত তরুণদেরকেই প্রাধান্য দেয়। তিনি বলেন, তরুণদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে তারা ভোট কেন্দ্রে যাবে এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবে।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান ভোট দেবেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেক তরুণ ভোটার আছেন। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। যাদের পক্ষে জনগণ রায় দেবেন, তারাই আবার সরকার গঠন করবেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সকলে দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।

রাজধানীর উত্তরায় নিজ আসনে ভোট দেবেন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মঈন। আসন্ন এ নির্বাচনে কাকে ক্ষমতায় দেখতে চান, জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল ও উন্নয়নমুখী নেতৃত্ব আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন নিয়ে আমার পরামর্শ থাকবে, তরুণরা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া দেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোট একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এখানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। সবাইকে ভোট দিতে হবে। সবাই এই নির্বাচনে সানন্দে অংশগ্রহণ করবে। দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমি দেশের বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কেন্দ্র গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

আরো পড়ুন: ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় আওয়ামীপন্থীদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ২৮টি দল অংশ নিচ্ছে। বিএনপিসহ ১৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভুঁঞা এবার সিলেট-১ আসনে ভোট দেবেন। নির্বাচন নিয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটা দেশে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্ষমতার পালাবদল ও যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করার মাধ্যম এ নির্বাচন। যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করতে হলে এ নির্বাচন প্রক্রিয়াই অনুসরণ করতে হবে।

তাই তিনি শিক্ষার্থীদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি চাই শিক্ষার্থীরা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবে। তারা তাদের নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।

এদিকে, নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে আজ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।’ তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের ভোট দেবেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। তিনি বলেন, এবার আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব। আমি এ নীতিতে বিশ্বাসী। আমি চাই, সবাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তিনি বলেন, আমি স্বাভাবিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেই ক্ষমতায় দেখতে চাই। যে শক্তি স্বাধীনতার পক্ষে তাকেই নিঃসন্দেহে ক্ষমতায় দেখতে চাইবো। খবরে দেখলাম এবার নির্বাচন নিয়ে সব জায়গায় নিরাপত্তা বেশ জোরদার করা হয়েছে। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, আমি সেই প্রত্যাশা করছি।

চট্টগ্রাম-৯ আসনের ভোটার রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। তিনি বলেন, মানুষ সব জায়গায় ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। আমি বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেছি। এসব এলাকায় ঘুরে আমার অন্তত এটাই মনে হয়েছে। যে যেই প্রতীক পছন্দ করেন, তারা তাকেই ভোট দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, মানুষ আজ নিজে থেকেই নৌকাকে পছন্দ করছে। কেউ কিন্তু কাউকে বাধ্য করছে না। আমি শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের সঙ্গেও নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেছি। এ সময় আমি দেখেছি হাজার হাজার মানুষ ওনাকে শুভেচ্ছা জানাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন। বাঙালি নিজ থেকেই নৌকাকে ভোট দিতে চাচ্ছে। বাঙালির ভেতরে নৌকার প্রতি আলাদা ভালোবাসা ঢুকে গেছে।

যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে উল্লেখ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, এজন্য ইসির পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ