সিজিপিএ ৪-এ ৪ পেয়ে স্বর্ণপদক পেলেন ইস্ট ওয়েস্টের আবু তৈয়ব

শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করছেন আবু তৈয়ব
শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করছেন আবু তৈয়ব  © টিডিসি ফটো

মোহাম্মদ আবু তৈয়বের জন্ম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে মেজো তিনি। ছোটবেলা থেকে তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং সবার প্রয়োজনে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতেন। বড় হয়ে তিনি এমন একটি পেশায় যেতে চাইতেন যেখানে তিনি মানুষের সুস্থ জীবনযাপনে সহযোগিতা করতে পারবেন।

চট্টগ্রামের গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন আবু তৈয়ব। চট্টগ্রাম থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে ভর্তি হন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড মলিকুলার ফার্মাকোলজি বিভাগে। 

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তনে স্বর্ণপদকে মনোনয়নপ্রাপ্ত চারজন শিক্ষার্থীর মো. মোহাম্মদ আবু তৈয়বও একজন। স্নাতকোত্তরে তার সিজিপিএ ৪-এ ৪। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ সমাবর্তনে এ কৃতি শিক্ষার্থী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

স্কুল-কলেজ থেকে জীববিজ্ঞান ও রসায়নে প্রতি ভালো লাগা তৈরি হওয়ায় আবু তৈয়ব চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন ফার্মাসিস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, হসপিটাল সেক্টরে কাজ করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যায়; তাই তিনি এ বিভাগে আসেন।

আরও পড়ুন: বাবা ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ হলেন ছেলে

দুর্ভাগ্যবশত আবু তৈয়বের স্নাতকের শেষের সেমিস্টারগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। চিকিৎসা নিয়েও তেমন সুফল পাননি। এরপর থেকেই তার ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার ওপর আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং প্রকাশ করেন বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র। 

স্নাতকোত্তরের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে বায়োমডিক্যাল সায়েন্সেসের মৌলিক বিষয়গুলো যেমন মলিকুলার বায়োলজি, প্যাথোফিজিওলোজি, ফার্মাকোথেরাপি, ইমিউনোফার্মাকোলজি ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত পড়ানো হয়। 

তিনি জানান, এসব বিষয়ের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণা করার আগ্রহ থেকে এ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। এই প্রোগ্রামে মলিকুলার স্তরে রোগের উৎপত্তি এবং তাদের চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সর্বোত্তম কার্যকরী ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ তৈরি করতে হলে একটি রোগ উৎপত্তির সময় কোষে এবং টিস্যুতে মলিকুলার স্তরে কি কি প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন হয় সেটা জানা প্রয়োজন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামটি এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

একাডেমিক শিক্ষা জীবনে পাঠ্যবই এবং লেকচার সিটের পাশাপাশি যে কোনো বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য বিভিন্ন জার্নাল আর্টিকেল পড়তেন আবু তৈয়ব। তার কয়েকটি সহ-রচয়িতা আর্টিকেল কিউ-১ জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন গবেষণার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। স্নাতক প্রোগ্রামে তার কয়েকটি গবেষণার কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল আলফা-অ্যামাইলেজ ইনহিবিশন টেস্ট। 

এটি করার সময় তার তিনটি প্রোটোকল অনুসরণ করতে হয়। যেখানে তিনি প্রথম দুটি প্রোটোকলে পজেটিভ কন্টোলের ফলাফলগুলো পুনরুৎপাদন করতে ব্যর্থ হন। টানা দুইবার ব্যর্থতার পরেও তিনি টেস্টটি তার প্রজেক্ট থেকে বাদ দেননি। পরবর্তীতে অন্য আরেকটি ভিন্ন প্রোটোকল অনুসরণ করে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়েছিলেন। সফলতা না আসার আগ পর্যন্ত ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা তার সাফল্যের একটি বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।

তার সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি পেলে অবশ্যই যে কেউ খুব খুশি হবে আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এই স্বীকৃতি আমাকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন এবং গবেষণায় নিজেকে নিযুক্ত রাখতে আরো অনুপ্রেরণা জোগাবে। মেধাবী এ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করেন, স্বর্ণপদক অর্জন তার জ্ঞানার্জন এবং তা মানুষের জীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 আরও পড়ুন: নাসার উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় স্থান পেল মাধ্যমিকের ৫ তরুণের প্রজেক্ট

ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে তিনি ওষুধসংক্রান্ত বিজ্ঞানের (ফার্মাকোলজি) ওপর আরো উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা করতে চান। বিশেষ করে তিনি জানতে চান কীভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে নতুন ঔষধ ডেভেলপমেন্টের জন্য টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা আমাদের জটিল সমস্যা যেমন অটোইমিউন এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলোকে দক্ষতার সাথে নিরাময় করবে। সুযোগ পেলে শিক্ষকতায় নিজেকে নিযুক্ত করতে চান বলেও জানান তিনি।

স্বর্ণপদক সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার স্বর্ণপদক অর্জনের পিছনে অবশ্যই বাবা-মা এবং ভাইবোনদের অবদান সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকদের মধ্যে স্নাতকোত্তর রিসার্চ সুপারভাইজার প্রফেসর ড. শামসুন্নাহার খান আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তার দিকনির্দেশনা ছাড়া সাফল্য পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আশফাক আহমেদ এবং নাজমুল ইসলাম স্যারের নিকট আমি চিরকৃতজ্ঞ তারা আমাকে সবসময় নির্দেশনা ও সমর্থন- করেছে।

জুনিয়রদের সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঠ্যবই ও লেকচার সিটের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক জার্নাল আর্টিকেলগুলো দেখতে হবে। ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্স হচ্ছে গতিশীল ক্ষেত্র, যেখানে মানবদেহের বিভিন্ন রোগ ও তাদের চিকিৎসা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ক্রমাগত গভীর এবং উন্নত হচ্ছে। তাই এসব পরিবর্তন সম্পর্কে নিজেকে অবগত রাখতে আর্টিকেল পেপার পরার বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। যাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা তাদের জন্য উপদেশ থাকবে, প্রযুক্তিগত ব্যবহারিক পদ্ধতির পাশাপাশি পরিসংখ্যানগত এবং বায়ো- ইনফরমেটিক্স টুলসগুলো রপ্ত করতে হবে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আফতাবনগর খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদানের পাশাপাশি সমাবর্তনে ডিগ্রি প্রদান করা হয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২ হাজার ৮৬১ জন শিক্ষার্থীকে। 

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের সম্মতিক্রমে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ডিগ্রি প্রদান করেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির কুহনে লজিস্টিকস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালান ম্যাককিনন। 

এছাড়াও সমাবর্তনে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন  ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস্ রহমান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সৈয়দ মনজুর এলাহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। 


সর্বশেষ সংবাদ