ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বের বয়সসীমা কত?

ছাত্রদলের লোগো
ছাত্রদলের লোগো  © সংগৃহীত

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন নেতৃত্বের জন্য তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে সংগঠনটিতে। প্রার্থীরা লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে নতুন নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে সভায় বয়সসীমা ঠিক করতে পারেন নি নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শীঘ্রই বয়সসীমা ঠিক করে দেবেন।

২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। প্রথমবারের মতো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা ছাড়াই দুই বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তার এসএসসি উত্তীর্ণের সাল ২০০০। আর সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন অনুযায়ী তিনি এসএসসি পাস করেন ২০০৩ সালে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে আছেন ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের তিনজন। তাদের এসএসসি উত্তীর্ণের সাল ২০০৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বিশ্ববিদ্যালয় সেশন ২০০৬-২০০৭। তিনি এসএসসি পাস করেছেন ২০০৩ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন।

সময় মতো কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদলের নেতৃত্বে জট তৈরি হয়েছে। গতবার কমিটি গঠনের শুরুতে বয়স কমানোসহ বিবাহিতদের বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে সেই জট কিছুটা কমেছে। দলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন কমিটি গঠনে তৎপর নীতিনির্ধারকরা। মূলদল বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো অবস্থানে নেই ছাত্রদল। ফলে নতুন কর্মীর সংকট রয়েছে সংগঠনটিতে। যার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি ও হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংগঠনটিকে। দেশের জেলা ও উপজেলা ইউনিটগুলোতেও একই চিত্র।

আরও পড়ুন- শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সমর্থনে প্রতীকী অনশনে ছাত্রদল

নতুন নেতৃত্বের বয়স নির্ধারণে ইতোমধ্যে সভা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির সদস্যদের প্রস্তাবনা নেয়া হলেও এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি সংগঠনটি। ওই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভায় ৬০ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৪৬ জন। তাদের মধ্যে ২১ জন জেলা কমিটিতে ২০০৪ সালে যারা এসএসসি পাস করেছে তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার পক্ষে মত দেন। ১৩ জন ২০০৫ সালের পক্ষে। ৫ জন ২০০৩ সালের পক্ষে। ৪ জন ২০০৭ সালের পক্ষে। আর একজন ২০০৬ সালের পক্ষে।

উপজেলা কমিটিতে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করাদের নেতৃত্বে দেখতে ভোট দেন ৩২ জন। ৫ জন ২০০৯ সালের পক্ষে. তিনজন ২০০৫ ও ২০০৯ সালের পক্ষে এবং একজন করে ভোট দেন ২০০৬ ও ২০১০ সালের পক্ষে। সভায় জেলা কমিটির ক্ষেত্রে দুইজন এবং উপজেলা কমিটিতে একজন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তারা মন্তব্য লিখেন। গতকাল অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় জেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটির ক্ষেত্রে এসএসসি ২০০৩, পূর্ণাঙ্গের ক্ষেত্রে এসএসসি ২০০৫ ও উপজেলা পর্যায়ে এসএসসি ২০০৭ সাল ধরে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরও পড়ুন- মিথ্যা মামলায় তাজমেরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে: ছাত্রদল

সূত্র জানায়, ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বের বয়সসীমা এখনো ঠিক করা সম্ভব হয়নি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ও কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে বয়সকাঠামো ঠিক করা হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির আগামী নেতৃত্ব ২০০৪ ও ২০০৫ সালের এসএসসি পাস করাদের মধ্য থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলেই ছাত্রদলের আগামী নেতৃত্ব গঠিত হবে বলে আশা করি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ৬০ সদস্য নিয়ে চলছে। আগের কমিটি ৭৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ঢাউস কমিটি গঠন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো। যার কারণে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১ সদস্যের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করায় ক্ষোভ রয়েছে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কাউকে মধুর ক্যান্টিনের দলীয় টেবিলে বসতে দেন না। অনশন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে খসড়া তালিকা করার সময় বেঁধে দিলেও ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেটি ১০ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে নেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনো তালিকা প্রস্তুত করতে পারেননি শীর্ষনেতারা। তালিকা প্রস্তুত করতে কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতাদের কাছে আগামী দুইদিনের মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের নাম চান তারা।

কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করতে না পারায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে না। ইউনিটের কমিটিগুলো করা হয়ে গেলে সেখানে যাদের পদায়ন করা সম্ভব হবে না তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করা যাবে। তাহলে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। তারা দাবি করেন, তাদের মধ্য থেকে একজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি বানাতে হবে। বাকী যারা বাদ পড়বেন তাদের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দিতে হবে। বর্তমানে এই সেশনের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে রয়েছেন।

আরও পড়ুন- শাবিপ্রবিতে হামলা: ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ (ভিডিও)

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। শীঘ্রই তালিকা তৈরি করার কাজ শেষ হবে। নতুন নেতৃত্বের জন্য বয়স কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণ সভায় সবাই মতামত দিয়েছেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত দেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ